অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে শেয়ার কারসাজির আলোচিত কোম্পানি ফাইন ফুডস। ব্যবসায়িক পারফরমেন্স ভালো না হলেও শেয়ার দর আকাশ চুম্বি। এ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ শেয়ার দর নিয়ে কারসাজির জন্য কৃত্রিম আর্থিক হিসাব দেখিয়ে আসছে। এক্ষেত্রে ব্যয় কমিয়ে মুনাফা বেশি ও সম্পদ বেশি দেখিয়ে আসছে। যা কোম্পানিটির নিরীক্ষকের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

বেশ কিছুদিন ধরে স্বল্প মূলধনী ফাইন ফুডসের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে শেয়ারটিকে ৩৮০ টাকার উপরে তুলে আনা হয়েছে। ...

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে শেয়ার কারসাজির আলোচিত কোম্পানি ফাইন ফুডস। ব্যবসায়িক পারফরমেন্স ভালো না হলেও শেয়ার দর আকাশ চুম্বি। এ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ শেয়ার দর নিয়ে কারসাজির জন্য কৃত্রিম আর্থিক হিসাব দেখিয়ে আসছে। এক্ষেত্রে ব্যয় কমিয়ে মুনাফা বেশি ও সম্পদ বেশি দেখিয়ে আসছে। যা কোম্পানিটির নিরীক্ষকের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

বেশ কিছুদিন ধরে স্বল্প মূলধনী ফাইন ফুডসের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে শেয়ারটিকে ৩৮০ টাকার উপরে তুলে আনা হয়েছে। যার সঙ্গে কোম্পানি কর্তৃপক্ষের সরাসরি যোগসাজোশ রয়েছে। তারা শেয়ারটি নিয়ে কারসাজিতে সহযোগিতা করতে কৃত্রিম আর্থিক হিসাবসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে আসছে। যারা সম্প্রতি উচ্চ মূল্যের শেয়ারটি নিয়ে কারসাজির অংশ হিসেবে চলতি অর্থবছরের ১ম প্রান্তিকেও অস্বাভাবিক মুনাফা দেখিয়েছে।

গত ৬ নভেম্বর বিকেলে কোম্পানিটির চলতি অর্থবছরের ১ম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি মুনাফা ২.৫৭ টাকা হয়েছে বলে আর্থিক হিসাব প্রকাশ করা হয়। যার পরিমাণ এর আগের বছরের একই সময়ে হয়েছিল ০.৬২ টাকা। এতে করে মুনাফা ১.৯৫ টাকা বা ৩১৫ শতাংশ বেড়েছে বলে জানানো হয়েছে।

তবে গত কয়েক বছর ধরেই ফাইন ফুডসের মুনাফার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছেন নিরীক্ষক। যারা কোম্পানির মুনাফাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সত্যতা পাননি এবং বড় ধরনের মিথ্যা তথ্য দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন। যা সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের আর্থিক হিসাবেও জানিয়েছেন।

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কোম্পানিটির আর্থিক হিসাবে ১১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা আয়, বাকিতে বিক্রি বাবদ পাওনা ২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, কাঁচামাল ক্রয় ৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ও ফিঙ্গারলিঙ্ক ক্রয়ে ২ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানিয়েছে। কিন্তু এসব লেনদেনের প্রায় সব নগদে করেছে বলে কোম্পানি কর্তৃপক্ষের দাবি। ফলে বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের অভাব ও নগদে করার কারনে, ওইসব লেনদেনের সত্যতা যাচাই করতে পারেনি নিরীক্ষক। যাতে ওইসব লেনদেনকৃত তথ্য মিথ্যা হতে পারে বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক।

ফাইন ফুডস কর্তৃপক্ষ আর্থিক হিসাবে ক্যাপিটাল স্টক দেখিয়েছে ৩০ লাখ টাকা। তারা হিস্টোরিক্যাল কস্ট ভ্যালুতে এই সম্পদ দেখিয়েছে। যা সরাসরি আন্তর্জাতিক হিসাব মান (আইএএস)-৪১ লঙ্ঘন। তারা ওই সম্পদের প্রকৃত মূল্য বিবেচনায় নেয়নি। তবে প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাবে কি পরিমাণ ভুল বা মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়েছে, নিরীক্ষক তা বলতে পারেনি।

এ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আর্থিক হিসাবে ১১ কোটি ৪৫ লাখ টাকার মজুদ পণ্য দেখিয়েছে। যার সত্যতা যাচাইয়ে আংশিক বিষয়ে নিরীক্ষককে নিরীক্ষা কাজে সহযোগিতা করতে পারে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। ফলে স্বশরীরে এবং বিকল্প নিরীক্ষা প্রক্রিয়া দিয়েও নিরীক্ষক ওই সম্পদের সত্যতা যাচাই করতে পারেনি। ফলে কোম্পানিটির মজুদ পণ্য হিসেবে ও বিক্রিত পণ্যের ব্যয় (কস্ট অব গুডস সোল্ড) হিসাবে মিথ্যা তথ্য দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক।

নিরীক্ষকের মন্তব্য অনুযায়ি এ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ যদি কস্ট অব গুডস সোল্ড কম দেখিয়ে থাকে, তাহলে নিট মুনাফা অতিরঞ্জিত করে দেখিয়েছে। যা শেয়ার কারসাজির এ কোম্পানিটির জন্য অস্বাভাবিক না।

আরও পড়ুন.....

ফাইন ফুডসের শেয়ার কারসাজিতে জড়িতদের ১.৯৭ কোটি টাকা জারিমানা

এ কোম্পানিটি থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বেতনাদি বাবদ ব্যয় হয়েছে ৩৬ লাখ টাকা। যা কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ব্যাংকিং চ্যানেলের বাহিরে নগদে প্রদান করেছে। যা আয়কর আইন ২০২৩ এর ধারা ৫৫ (টা) অনুযায়ি অগ্রহণযোগ্য।

তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন কমপক্ষে ৩০ কোটি টাকা থাকার বাধ্যবাধকতা থাকলেও ফাইন ফুডসের আছে ১৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। যা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) রুলসের ব্যত্যয়।

শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ি ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে অবন্টিত লভ্যাংশ হস্তান্তর করেনি ফাইন ফুডস। কোম্পানিটিতে ৯ লাখ টাকার অবন্টিত লভ্যাংশ রয়েছে।

এসব বিষয়ে শেয়ারাবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বিএসইসির পরিচালক ও মূখপাত্র আবুল কালাম অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, অর্থবছর শেষে নিরীক্ষকের মতামতসহ তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বার্ষিক প্রতিবেদন কমিশনে আসে। যা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ যাচাই-বাছাই করে। এতে কোন অনিয়ম বা অসঙ্গতি পেলে, কমিশন আইন অনুযায়ি ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

উল্লেখ্য, ২০০২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ফাইন ফুডসের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এরমধ্যে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন শ্রেণীর (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতিত) বিনিয়োগকারীদের মালিকানা ৮৬.০৮ শতাংশ। কোম্পানিটির সোমবার (২২ ডিসেম্বর) শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ৩৮০.৭০ টাকায়।