উৎপাদন বন্ধ সত্ত্বেও বিদ্যুৎ-ওয়াসা ব্যয় : নিরীক্ষকের শঙ্কা অন্য কোম্পানির কার্যক্রম চলে

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে এসএমই মার্কেটে তালিকাভুক্ত এপেক্স ওয়েভিং অ্যান্ড ফিনিশিং মিলসের ব্যবসায়িক অবস্থা খুবই খারাপ। এরইমধ্যে উৎপাদন ও পণ্য বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে। তারপরেও কোম্পানির কারখানায় বিদ্যুৎ-ওয়াসাবাবদ ব্যয় হচ্ছে। যার কোন যৌক্তিক কারন দেখছেন না নিরীক্ষক। এছাড়া কোম্পানি কর্তৃপক্ষও এ বিষয়ে কোন কিছু জানাচ্ছে না। যাতে এপেক্স ওয়েভিং এর কারখানায় এপেক্স গ্রুপের অন্যকোন কোম্পানির উৎপাদন কার্যক্রম চলতে পারে বলে সন্দেহ নিরীক্ষকের।
কোম্পানিটির ২০২২-২৩ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় এ ভয়াবহ ...
অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে এসএমই মার্কেটে তালিকাভুক্ত এপেক্স ওয়েভিং অ্যান্ড ফিনিশিং মিলসের ব্যবসায়িক অবস্থা খুবই খারাপ। এরইমধ্যে উৎপাদন ও পণ্য বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে। তারপরেও কোম্পানির কারখানায় বিদ্যুৎ-ওয়াসাবাবদ ব্যয় হচ্ছে। যার কোন যৌক্তিক কারন দেখছেন না নিরীক্ষক। এছাড়া কোম্পানি কর্তৃপক্ষও এ বিষয়ে কোন কিছু জানাচ্ছে না। যাতে এপেক্স ওয়েভিং এর কারখানায় এপেক্স গ্রুপের অন্যকোন কোম্পানির উৎপাদন কার্যক্রম চলতে পারে বলে সন্দেহ নিরীক্ষকের।
কোম্পানিটির ২০২২-২৩ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় এ ভয়াবহ তথ্য জানিয়েছে নিরীক্ষক।
নিরীক্ষক জানিয়েছেন, এপেক্স ওয়েভিংয়ের ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্য উৎপাদন, কাঁচামাল ক্রয় ও পণ্য বিক্রি কিছুই হয়নি। কিন্তু তারপরেও আর্থিক হিসাবে বিদ্যুৎ ও ওয়াসা বিলবাবদ ব্যয় দেখানো হয়েছে। ফলে কারখানা অন্য কোন কোম্পানির উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে কিনা, তা জানতে চায় নিরীক্ষক। তবে কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট এ বিষয়ে কোন ব্যাখ্যা দেয়নি। এমনকি উৎপাদন, কাঁচামাল ক্রয় ও পণ্য বিক্রি বন্ধ এবং বিদ্যুৎ ও ওয়াসা বিলের বিষয়ে অন্যকোনভাবেও জানতে পারেনি নিরীক্ষক।
কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ এবং কোন পণ্য বিক্রি না হওয়ার মতো ঘটনা ঘটার পরেও এপেক্স ওয়েভিং কর্তৃপক্ষ মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করেনি বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক।
নিরীক্ষক জানিয়েছেন, নগদ বহি ও ব্যাংক স্টেটমেন্ট তাদেরকে দেওয়া হয়নি। যাতে কোম্পানির নগদ অর্থের পরিমাণ ও অর্থ গ্রহণ/প্রদানের তথ্য নিশ্চিত হতে পারেননি। এছাড়া কোম্পানি কর্তৃপক্ষ নগদ লেনদেন করেছে দাবি করলেও তার স্বপক্ষে কোন প্রমাণাদি দিতে পারেনি। এমনকি ম্যানেজমেন্টের বাঁধার কারনে নগদ অর্থের পরিমাণ সরেজমিনে যাচাই করতে পারেনি নিরীক্ষক।
৬১ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধনের ইউসুফ ফ্লাওয়ারে ৫০ কোটি গরমিল
এপেক্স ওয়েভিংয়ের ঋণ পূণ:তফসিল করা হয় ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর। এরপরে ২০২১ সালের ৩১ মার্চ প্রথম কিস্তি প্রদান করে। সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে মাত্র ৪ লাখ টাকা প্রদান করে। এর বাহিরে ঋণের বিষয়ে বর্তমান অবস্থা জানতে পারেনি নিরীক্ষক। যে কোম্পানিটির আর্থিক হিসাব অনুযায়ি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫২ কোটি ৩১ লাখ টাকা। কিন্তু আর্থিক হিসাবে সুদজনিত ব্যয় দেখানো হয়েছে ৬ লাখ টাকা। যার পরিমাণ আগের অর্থবছরে ছিল ৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা। প্রমাণাদির অভাবে বছরের ব্যবধানে এতো কম সুদজনিত ব্যয় দেখানোর বিষয়টি জানতে পারেননি নিরীক্ষক।
২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ কোটি ২ লাখ টাকার বিল আদায় হয়েছে বলে আর্থিক হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু ব্যাংক হিসাবে এমন কিছু পায়নি নিরীক্ষক। এছাড়া কোম্পানি কর্তৃপক্ষ সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার মতো কোন প্রমাণাদি দেয়নি।
এপেক্স ওয়েভিং কর্তৃপক্ষ আর্থিক হিসাবে ৭৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকার স্থায়ী সম্পদ দেখিয়েছে। তবে ওই সম্পদের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য অ্যাসেট রেজিস্টার বা অন্যকোন প্রমাণাদি নিরীক্ষককে দিতে পারেনি কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। যে কোম্পানিটির ২০২২-২৩ অর্থবছরে অবচয় চার্জ করা হয়নি। এমনকি ইমপেয়ারমেন্ট টেস্টও করেনি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে এপেক্স ওয়েভিংয়ের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, নিরীক্ষকতো আমাদেরকে এসব কিছু জানায়নি। এমনতো হওয়ার কথা না। তবে উৎপাদন বন্ধ আছে, এ তথ্য সঠিক। আর মাঝেমধ্যে মেশিনারীজ ঠিক রাখার জন্য চালু করা হয়। সে কারনেই হয়তো বিদ্যুৎ-ওয়াসা বিল আসে।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে এসএমইতে তালিকাভুক্ত হওয়া এপেক্স ওয়েভিংয়ের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৩৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এরমধ্যে ৬৯.৮৮ শতাংশ মালিকানা রয়েছে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন শ্রেণীর (উদ্যোক্তা/পরিচালক ছাড়া) বিনিয়োগকারীদের হাতে। কোম্পানিটির সোমবার (০৮ জুলাই) শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ১২.৫০ টাকায়।
চলবে....