ভালো ব্যবসা দেখিয়ে শেয়ারবাজার থেকে বুক বিল্ডিংয়ে উচ্চ দরে শেয়ার ইস্যু করে আমান কটন ফাইব্রাস। তবে কয়েক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) পূর্ব ৯ মাসের শেয়ারপ্রতি ২.৪৪ টাকার মুনাফা এখন টানা লোকসান। যে কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ করে ক্যাপিটাল ও লভ্যাংশ উভয় ক্ষেত্রেই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হয়েছে। অথচ কোম্পানিটির ব্যবসা সম্প্রসারন ও সুদজনিত ব্যয় কমানোর মাধ্যমে মুনাফা বৃদ্ধি করতে শেয়ারবাজারে আনা হয়।

আমান গ্রুপের আমান ফিড ও আমান ...

ইব্রাহিম হোসাইন (রেজোয়ান) : ভালো ব্যবসা দেখিয়ে শেয়ারবাজার থেকে বুক বিল্ডিংয়ে উচ্চ দরে শেয়ার ইস্যু করে আমান কটন ফাইব্রাস। তবে কয়েক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) পূর্ব ৯ মাসের শেয়ারপ্রতি ২.৪৪ টাকার মুনাফা এখন টানা লোকসান। যে কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ করে ক্যাপিটাল ও লভ্যাংশ উভয় ক্ষেত্রেই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হয়েছে। অথচ কোম্পানিটির ব্যবসা সম্প্রসারন ও সুদজনিত ব্যয় কমানোর মাধ্যমে মুনাফা বৃদ্ধি করতে শেয়ারবাজারে আনা হয়।

আমান গ্রুপের আমান ফিড ও আমান কটন শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত। এই গ্রুপটির উদ্যোক্তা/পরিচালকেরা দূর্ণীতির সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। যারা বিনিয়োগকারীদের দিনের পর দিন ঠকিয়ে যাচ্ছে। এরইমধ্যে শাস্তির আওতায় আনা হলেও দূর্ণীতি থেকে বেরিয়ে আসেনি তারা।

২০২২ সালের জানুয়ারিতে সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের কারণে কমিশন সভায় আমান কটন ফাইব্রাসের প্রত্যেক পরিচালককে ৩ কোটি টাকা করে জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কোম্পানিটির চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম, পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম ও মো. তরিকুল ইসলামের প্রত্যেককে ৩ কোটি টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এ ৪ পরিচালকের জরিমানার পরিমাণ দাঁড়ায় ১২ কোটি টাকায়।

কোম্পানিটির বিরুদ্ধে যেসব সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে কমিশন তার মধ্যে রয়েছে - পরিকল্পনা অনুসারে আইপিওর অর্থ ব্যয় না করা, যৌথ উদ্যোগ, সহযোগী বা অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ও অধিগ্রহণের উদ্দেশ্যে আইপিও তহবিল ব্যবহার করা, কোম্পানির আর্থিক অবস্থানের বিষয়ে সঠিক ও প্রকৃত চিত্র তুলে না ধরা, বিশেষ নিরীক্ষককে সহযোগিতা না করা এবং যথাযথ দলিলাদি ছাড়াই সম্পর্কিত পক্ষের মধ্যে লেনদেন করা। অন্যদিকে কোম্পানিটির নিরীক্ষিক আতা খান অ্যান্ড কোম্পানিকে সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের জন্য ১০ লাখ টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

ইস্যু ম্যানেজার আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে আমান কটন ২০১৮ সালে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ারবাজারে আসে। ওইসময় প্রতিটি শেয়ারের কাট-অফ প্রাইস ৪০ টাকা নির্ধারন হয়। এতে প্রতিটি শেয়ারে প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে ৩০ টাকা। তবে সাধারন বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩৬ টাকা করে শেয়ার ইস্যু করে। কিন্তু সেই কোম্পানি সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ব্যবসায় শুধুমাত্র সাধারন শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা দেয়। যা কাট-অফ প্রাইস মূল্য বিবেচনায় ২.৫০ শতাংশ।

আরও পড়ুন......

৭৫ টাকা কাট-অফ প্রাইসের রানার টানা লোকসানে

৮০ টাকা কাট-অফ প্রাইসের বসুন্ধরার ‘নো’ ডিভিডেন্ড

বারাকা পাওয়ারের ইস্যু দর ৬০ টাকা : বাজার দর ১০ টাকা

প্রিমিয়ামে ১৫০ কোটি টাকা নেওয়া লুব-রেফ ৩ বছরেই লোকসানে

৩২ টাকা কাট-অফ প্রাইসের বারাকা পতেঙ্গার বাজার দর ১০.১০ টাকা

এনার্জিপ্যাকের আইপিও পূর্ব ৪৭ কোটি টাকার মুনাফা এখন লোকসান ৯৯ কোটি

এদিকে ৪০ টাকা কাট-অফ প্রাইসের আমান কটনের শেয়ার দর এখন ১৮.৪০ টাকা। এতে করে ক্যাপিটাল লোকসানে কোম্পানিটির বিনিয়োগকারীরা।

এমন উচ্চ মূল্যের কোম্পানিটির ২০২২-২৩ অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে (০.৯৪) টাকা। এরপরে ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও লোকসান হয়েছে। ওই অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে (০.২৫) টাকা। অথচ শেয়ারবাজারে আসার আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছিল ২.৪৪ টাকা।

ব্যবসায় এই পতনের কারন হিসেবে কাচাঁমালের দাম ও ওভারহেড খরচ বৃদ্ধিকে উল্লেখ করেছে আমান কটন কর্তৃপক্ষ। এছাড়া গ্যাস, প্যাকিং ম্যাটেরিয়ালস ও অন্যান্য ম্যাটেরিয়ালসের দর বৃদ্ধি কারন হিসেবে রয়েছে। একইসঙ্গে ডলার রেট বৃদ্ধিতে সুদজনিত ব্যয় বেড়েছে বলে জানিয়েছে।

(পরবর্তী পর্বে কোম্পানিটির আইপিও ফান্ড উদ্যোক্তা/পরিচালকদের ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহারে যে সমস্যায় আটকে রয়েছে, তা তুলে ধরা হবে)