বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের বড় একটি সমস্যা সবাই বোদ্ধা হয়ে যাওয়া। কোন রকম তথ্য-উপাত্ত ছাড়াই মনগড়া কথা বলে স্বস্তা জনপ্রিয়তা পেতে চায়। এ তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে শেয়ারবাজার নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করা ব্যক্তিরা রয়েছেন। এমনকি প্রাইমারি রেগুলেটর স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালকেরাও তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তথ্য ছাড়াই কথা বলেন।

গত ১৫ বছরে অনেক বাজে কোম্পানি শেয়ারবাজারে এসেছে, যার ৮০-৯০% ভূয়া কোম্পানি, অর্ধেকের বেশির অস্বিত্ব নাই- এসব তথ্য-উপাত্ত ছাড়া ...

ইব্রাহিম হোসাইন (রেজোয়ান) : বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের বড় একটি সমস্যা সবাই বোদ্ধা হয়ে যাওয়া। কোন রকম তথ্য-উপাত্ত ছাড়াই মনগড়া কথা বলে স্বস্তা জনপ্রিয়তা পেতে চায়। এ তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে শেয়ারবাজার নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করা ব্যক্তিরা রয়েছেন। এমনকি প্রাইমারি রেগুলেটর স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালকেরাও তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তথ্য ছাড়াই কথা বলেন।

গত ১৫ বছরে অনেক বাজে কোম্পানি শেয়ারবাজারে এসেছে, যার ৮০-৯০% ভূয়া কোম্পানি, অর্ধেকের বেশির অস্বিত্ব নাই- এসব তথ্য-উপাত্ত ছাড়া বয়ান দেওয়া বাজার বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে নিয়মিত শুনে আসছে বিনিয়োগকারীরা। সবই বলা হয়েছে নিজেদের মনগড়া কথা। যার সঙ্গে বাস্তবতার কোন মিল ছিল না। অর্থ বাণিজ্যের এক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন তথ্য।

এক মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা (সিইও) অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে চারদিকে শুধু নেতিবাচক খবর। যে যেমনে পারে, তেমনেই নেতিবাচক খবর ছড়ায়। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় তারা তথ্য ছাড়াই মিথ্যা নেতিবাচক খবর ছড়ায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন শিক্ষককেও দেখেছি যে নিয়মিত টকশো ও ফেসবুকে তথ্য ছাড়াই অবলীলায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে গেছে। অথচ তার পোর্টফোলিও পঁচা শেয়ারের কারখানা ছিল।

তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে শেয়ারবাজারে আসা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, এমারেল্ড অয়েল, তুং হাই নিটিং, রিজেন্ট টেক্সটাইল, খুলনা প্রিন্টিং ও নূরানি ডাইং বন্ধ হয়ে গেলেও, ওইসব বোদ্ধারা সবসময় বলে বেড়িয়েছে অর্ধেকের বেশি উধাঁও হয়ে গেছে। কখন এসব বোদ্ধারা তথ্য-উপাত্ত ঘেটে দেখেনি।

দেখা গেছে গত ১৫ বছরে (২০১০-২০২৪) সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে ১৩৮ কোম্পানি। এরমধ্যে পুরো বাণিজ্যিক কার্যক্রমে রয়েছে ৮৪.৭৮% কোম্পানি। আর আংশিক উৎপাদনে রয়েছে ৭.৯৭% কোম্পানি। এছাড়া সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ব্যবসায় ওই ১৩৮ কোম্পানির মধ্যে ৭৮.২৬ কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিয়েছে।

এর বিপরীতে গত ১৫ বছরে আসা ১৩৮ কোম্পানির মধ্যে মাত্র ৬.৫২% কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে। আর লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ কোম্পানির এ হার ২১.৭৪%।

এরপরেও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) দোষারোপের জন্য বন্ধ কোম্পানির সংখ্যাই বেশি বলে আসছে তথ্য-উপাত্ত ছাড়া নামধারী বাজার বিশেষজ্ঞরা। এইসব বিশেষজ্ঞরা সবসময় নেতিবাচক কথা বলে শেয়ারবাজারকেই পিছিয়ে দিয়েছে।

আরেক মার্চেন্ট ব্যাংকার অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, বাংলাদেশের আইপিও কোম্পানির তুলনায় ভারতে খুবই খারাপ। তাদের একটা বড় অংশ শেয়ার লেনদেনের প্রথম দিনেই ইস্যু মূল্যের নিচে চলে যায়। নিয়মিত তালিকাচ্যুত করা হয় কোম্পানি। এটা খুব স্বাভাবিক ঘটনা। কখনোই সব কোম্পানি টিকে থাকবে না এবং মুনাফা করবে না। সব কোম্পানি স্কয়ার ফার্মা হয়ে উঠবে না।