অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স অনিয়মের আঁকড়ায় পরিণত হয়েছে। কোম্পানিটিতে অনেকটা অনিয়মই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে শত শত কোটি টাকার অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে নিরীক্ষক। কোম্পানিটির সর্বশেষ ২০২৪ সালের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় অনেক ভয়াবহ অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে নিরীক্ষক।

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, বীমা দাবি বকেয়ার পরিমাণ ১৩৪ কোটি ১২ লাখ টাকা। এরমধ্যে ২০২০-২০২২ সাল পর্যন্ত সময়ের জন্য ৪৭ হাজার ৭২৬টি বীমা দাবির প্রেক্ষিতে বকেয়ার পরিমাণ ৮৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। ...

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স অনিয়মের আঁকড়ায় পরিণত হয়েছে। কোম্পানিটিতে অনেকটা অনিয়মই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে শত শত কোটি টাকার অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে নিরীক্ষক। কোম্পানিটির সর্বশেষ ২০২৪ সালের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় অনেক ভয়াবহ অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে নিরীক্ষক।

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, বীমা দাবি বকেয়ার পরিমাণ ১৩৪ কোটি ১২ লাখ টাকা। এরমধ্যে ২০২০-২০২২ সাল পর্যন্ত সময়ের জন্য ৪৭ হাজার ৭২৬টি বীমা দাবির প্রেক্ষিতে বকেয়ার পরিমাণ ৮৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। অথচ বীমা আইন অনুযায়ি বীমা দাবি ৯০ দিনের মধ্যে পরিশোধের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

বীমা আইন অনুযায়ি কোম্পানির কমপক্ষে ৩০ পরিশোধিত মূলধন রাখা দরকার। এছাড়া ওই মূলধনের ৬০% মালিকানা থাকতে উদ্যোক্তাদের। কিন্তু প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্সে পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আর এতে উদ্যোক্তাদের মালিকানা ৩৮.৮২%।

এ কোম্পানিটিতে সরকারের ১৩ কোটি ৩১ লাখ টাকার আয়কর বকয়ো রয়েছে। তবে কোম্পানিটির ২০২০-২০২৩ সাল পর্যন্ত আর্থিক হিসাব প্রস্তুত ও প্রকাশ ঝুঁলে ছিল। ফলে আয়কর মূল্যায়ন বা কি পরিমাণ দিতে হবে, সেটাও আটকে ছিল। এ কারনে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ সরকারি কোষাগারে আয়কর জমা দেয়নি। এ কারনে নিরীক্ষক নিশ্চিত হতে পারেননি সরকারি কোষাগারে আরও বেশি আয়কর দিতে হবে কিনা।

এ বীমা কোম্পানি ৯ বছর আগে ৪৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকার জমি ও ভূমি কিনেছে বলে আর্থিক হিসাবে দেখিয়েছে। তবে নিরীক্ষককে এ সংক্রান্ত প্রমাণাদি দেখাতে পারেনি। এই কোম্পানিটিরই চিটাগাংয়ে ৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা দিয়ে কেনা ৯৫০০ স্কয়ার ফিটের ফ্লোর নিয়ে ঝামেলা চলছে। গত ৮ বছরেও ওই ফ্লোর দখলে নিতে পারেনি বীমা কোম্পানিটি।

নিরীক্ষক যাচাই করে বীমা কোম্পানিটির ব্যালেন্স ৬ কোটি ২১ লাখ টাকা ঋণাত্মক দেখতে পান। এ কোম্পানিটির ক্লোজিং ডেটে ৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকার ইস্যুকৃত চেক ক্লিয়ারের জন্য অপেক্ষমান বলে দেখতে পান। ওইসব চেকের মধ্যে ১ কোটি ২৯ লাখ টাকার চেক ইস্যু করা হয়েছে ২০১৬ থেকে ২০২৩ সালের জুন মাসের মধ্যে।

আরও পড়ুন.....

ফেডারেল ইন্স্যুরেন্সে ৫৬.৭৬ কোটি টাকার গরমিল হিসাব

টাকার সংকটে থাকা প্রগ্রেসিভ লাইফ থেকে ধংস হয়ে যাওয়া বিভিন্ন লিজিং কোম্পানিতে এফডিআর করা হয়েছে। কোম্পানিটির ৫৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকার এফডিআর এর মধ্যে ১০ কোটি টাকা করা হয়েছে পিপলস লিজিংয়ে। এছাড়া ২৩ কোটি ৩ লাখ টাকা এফডিআর করা হয়েছে ফার্স্ট ফাইন্যান্স, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, প্রাইম ফাইন্যান্স ও ইউনিয়ন ক্যাপিটালে। সবগুলো লিজিং কোম্পানি বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘রেড জোন’-এ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বীমা কোম্পানিটির এফডিআর আদায় করা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন নিরীক্ষক।

এই বীমা কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ২৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকার ম্যানেজমেন্ট ব্যয় করেছে। অথচ তার বীমা আইন অনুযায়ি এ ব্যয়ের সীমা ছিল ১৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষ আর্থিক হিসাবে প্রিমিয়াম আয় দেখিয়েছে ৪০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। তবে ইন্স্যুরেন্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে (আইএমএস) নিরীক্ষক ৩২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা আয় পেয়েছেন।

উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এরমধ্যে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন শ্রেণীর (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতিত) বিনিয়োগকারীদের মালিকানা ৬১.১৮ শতাংশ। কোম্পানিটির রবিবার (২৯ জুন) শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ৪৫.৯০ টাকায়।