অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে শেয়ারবাজার অতল গহ্বরে হারানোর পথে ছিল। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আগামি ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণার পরে শেয়ারবাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তবে সেটা শেয়ারবাজারের স্বাভাবিক না। বাজার যে অতল গহ্বরে চলে গিয়েছিল, সেখান থেকে উঠে আসা ওতো সহজ না। ইক্যুইটি মার্কেটের এই করুণ অবস্থার মধ্যে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে প্রথমবারের মতো কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ ...

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে শেয়ারবাজার অতল গহ্বরে হারানোর পথে ছিল। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আগামি ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণার পরে শেয়ারবাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তবে সেটা শেয়ারবাজারের স্বাভাবিক না। বাজার যে অতল গহ্বরে চলে গিয়েছিল, সেখান থেকে উঠে আসা ওতো সহজ না। ইক্যুইটি মার্কেটের এই করুণ অবস্থার মধ্যে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে প্রথমবারের মতো কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। প্রথম পর্যায়ে স্বর্ণ, রুপা ও অপরিশোধিত পাম অয়েল দিয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বরে কমোডিটি এক্সচেঞ্জের পরীক্ষামূলক লেনদেন শুরু হবে। আর আগামী বছর থেকে নতুন এ প্ল্যাটফর্ম পূর্ণাঙ্গ রূপে চালু করতে চায় সিএসই কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্টদের মতে, কমোডিটি এক্সচেঞ্জ কেবল একটি পণ্য লেনদেনের প্ল্যাটফর্ম নয়-এটি একটি অর্থনৈতিক রূপান্তরের সূচনা। দেশে এ প্ল্যাটফর্ম চালু হলে অর্থনীতির সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। এর মাধ্যমে স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা, বিনিয়োগ বৈচিত্র্য এবং বাজারের আধুনিকায়ন নিশ্চিত হবে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরো দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করাবে। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে এটি বহুমাত্রিক ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

তবে এই কমোডিটি বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা আনতে হবে। বর্তমান কমিশনের উপর বিনিয়োগকারীদের যে অনাস্থা, তাতে করে এই মুহুর্তে ভালো কিছু আশা করা কঠিন। কারন এরইমধ্যে ইক্যুইটি মার্কেটের বিনিয়োগকারীরাই শোচণীয় অবস্থায় পড়ে গেছে।

কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার জন্য ২০০৭ সালে উদ্যোগ নিলেও ২০২৪ সালের ২০ মার্চে কমোডিটি এক্সচেঞ্জের চূড়ান্ত নিবন্ধন সনদ পায় সিএসই। এর আগে ২০১৭ সালের আগস্টে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার আগ্রহ প্রকাশ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি দেয় সিএসই। মন্ত্রণালয় থেকে পরে তা বিএসইসিতে পাঠানো হয়। আর ২০২০ সালে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালুর বিষয়ে আবারও কার্যক্রম শুরু হয়। সর্বশেষ চলতি বছরের ২৭ মে মাসে বিএসইসির ৯৫৬তম কমিশন সভায় ‘চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (কমোডিটি ডেরিভেটিভস) প্রবিধানমালা-২০২৫’ অনুমোদনের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন হতে চলেছে।

এদিকে, ২০২৩ সালে এক-চতুর্থাংশ শেয়ার কেনার মধ্যে দিয়ে সিএসইর কৌশলগত মালিকানায় এসেছে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ। আর সিএসইর কমোডিটি এক্সচেঞ্জ তৈরি জন্য পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছে ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ (এমসিএক্স)। প্রতিষ্ঠানটির সহযোগিতায় নিজস্ব প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিনিধিদের নিয়ে ইতিমধ্যে বেশ কিছু সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আয়োজন করেছে সিএইসি।

জানা গেছে, কমোডিটি এক্সচেঞ্জ হচ্ছে এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে বিভিন্ন ধরনের পণ্য কেনাবেচার সুযোগ থাকবে। তবে দৃশ্যমান পণ্য নয় বরং কাগুজে বা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে কেনাবেচা হবে। মূল পণ্যটি থাকবে কোনো গুদাম বা ওয়্যারহাউজে। সেখান থেকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর পণ্য হস্তান্তর হবে। তবে এখনই ওয়ারহাউজের মাধ্যমে পণ্য লেনদেন শুরু করবে না সিএসই। কমোডিটি এক্সচেঞ্জ পুরোদমে চালু করতে এখনো সিএসইর কিছু কাজ বাকি আছে। তবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে পরীক্ষামূলক লেনদেন চালু করা জন্য সার্বিক কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

প্রথম পর্যায়ে স্বর্ণ, রুপা ও অপরিশোধিত পাম অয়েল দিয়ে এক্সচেঞ্জটির কার্যক্রম পরিচালনা করার প্রস্তুত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে নতুন পণ্য যুক্ত করা হবে। কমোডিটি এক্সচেঞ্জে লেনদেন করা জন্য পণ্যের পুরো অর্থ পরিশোধ করার প্রয়োজন হবে না। মোট দামের ১০ থেকে ২০ শতাংশ অর্থ জমা দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পণ্য কিনতে পারবেন একজন ক্রেতা। ওই সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর দাম বাড়লে কিংবা কমলে মুনাফা সংগ্রহ বা লোকসান বহন করতে হবে। তবে পরবর্তীতে ওয়্যারহাউজ ব্যবস্থার কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করা হবে। সেই সঙ্গে পণ্য বাড়ানো হবে।