অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : চিকিৎসা ব্যয়ে প্রতিবছর প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় আস্থার অভাব, সঠিক রোগ নির্ণয় না হওয়া ও অনুন্নত সেবা ব্যবস্থাপনার কারণে এমনটি হচ্ছে। এর বাইরে স্বাস্থ্যখাতে জিডিপির মাত্র ১ শতাংশেরও কম বরাদ্দ অন্যতম কারণ। তাই স্বাস্থ্যখাতে সরকারি ব্যয় যেমন বাড়াতে হবে তেমনি উন্নত চিকিৎসার জন্যে বেসরকারি খাতেও বিনিয়োগ আরও বাড়ানো দরকার। চিকিৎসায় আরও উন্নত যন্ত্র ও উন্নতি প্রযুক্তির ব্যবহার ঘটাতে হবে।

শনিবার ...

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : চিকিৎসা ব্যয়ে প্রতিবছর প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় আস্থার অভাব, সঠিক রোগ নির্ণয় না হওয়া ও অনুন্নত সেবা ব্যবস্থাপনার কারণে এমনটি হচ্ছে। এর বাইরে স্বাস্থ্যখাতে জিডিপির মাত্র ১ শতাংশেরও কম বরাদ্দ অন্যতম কারণ। তাই স্বাস্থ্যখাতে সরকারি ব্যয় যেমন বাড়াতে হবে তেমনি উন্নত চিকিৎসার জন্যে বেসরকারি খাতেও বিনিয়োগ আরও বাড়ানো দরকার। চিকিৎসায় আরও উন্নত যন্ত্র ও উন্নতি প্রযুক্তির ব্যবহার ঘটাতে হবে।

শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে আস্থা বৃদ্ধি; মান নিয়ন্ত্রণে কৌশলগত কাঠামো নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধে এসব কথা বলেন। রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অডিটোরিয়ামে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউনাইটেড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ঢাকা চেম্বারের সাবেক ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, দেশে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার পথে বেশ কিছু বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এরমধ্যে সরকারি স্বাস্থ্য ব্যয়ে বরাদ্দ জিডিপির ১ শতাংশেরও কম। রোগীরা ৭৩ শতাংশ চিকিৎসা খরচ নিজে বহন করেন। মাত্র ২.৫ শতাংশ মানুষ স্বাস্থ্য বিমার আওয়াতায় রয়েছেন। প্রায় ৮০ শতাংশ হাসপাতালেই উন্নত ডায়াগনস্টিক যন্ত্রপাতি নেই। বেসরকারি খাত ৬০ শতাংশ সেবা দিলেও, তাতে উচ্চমূল্য ও গুণগত মানের পার্থক্য রয়েছে।

প্রবন্ধে আরও বলা হয়, বিদেশে চিকিৎসায় প্রতিবছর প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার বাইরে চলে যাচ্ছে। চিকিৎসা নিতে সবচেয়ে বেশি রোগী ভারতে যান। ভারতের চিকিৎসা ভিসার প্রায় ৫২ শতাংশ বাংলাদেশিদের। ২০২৪ সালে প্রায় ৪ লাখ ৮২ হাজার বাংলাদেশি রোগী ভারতে চিকিৎসা নিয়েছেন। চিকিৎসা নেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের পরে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার অবস্থান। দেশের চিকিৎসায় বিশ্বাসের ঘাটতি রয়েছে। রোগ নির্ণয় ঠিক হচ্ছে কি না তা নিয়ে সন্দেহ থাকে। হঠাৎ বিল বেড়ে যায় ও লুকানো খরচের ভয় থাকে। নকল ওষুধ ও নিম্নমানের সামগ্রীর আশঙ্কা।

এতে বলা হয়, সেবার মানে ঘাটতি ও স্বাস্থ্যকর্মীদের দক্ষতা কম। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসার অভাব রয়েছে। উন্নত চিকিৎসা শুধু ১৫টি কেন্দ্রে পাওয়া যায়, অনেক রোগী বিদেশে যেতে বাধ্য হন। এর বাইরে চিকিৎসার খরচ পূর্বে নির্ধারিত নেই। জটিল রোগের পরবর্তী সেবা পর্যাপ্ত নয়। একক স্বাস্থ্য তথ্য ব্যবস্থা নেই। স্বাস্থ্য প্রোগ্রামের তদারকি ও ক্রয় ব্যবস্থায় দুর্বলতা। একইসঙ্গে রোগী ও পরিবারের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবায় আস্থা কম। এসব কারণে রোগীরা দেশের বাইরে যাচ্ছেন।

প্রবন্ধে আরও বলা হয়, দেশের ৩৬টি স্পেশালাইজড হাসপাতালের মধ্যে ঢাকায় ১৯টির অবস্থান ও ঢাকার বাইরে ১৭ টি। ঢাকা বিভাগে হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সংখ্যা ১ হাজার ৮১০ টি। আর ৭ বিভাগে রয়েছে ৩ হাজার ৬৫১ টি।

এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারি স্বাস্থ্য ব্যয় দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম, মাথাপিছু খরচ মাত্র ১ হাজার ৭০ টাকা। দেশের ৪৯ শতাংশ মানুষ এখনও মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পায় না। মানুষের জন্য সরকারের উপযোগী স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম এখনো যথেষ্ট নয়।

প্রবন্ধে জানানো হয়, ২০২৫ সালে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের বাজার ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগামী ২০৩০-২০৩৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের বাজার প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলার হবে, অর্থাৎ এই খাতের আকার প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। দেশে একই সময়ে মেডিকেল ডিভাইসের বাজারও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২৫ সালে এটি ৮২০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে, যা ২০২০ সালে ছিল ৪৪২ মিলিয়ন ডলার। বিশেষ করে আমদানির চাহিদা বৃদ্ধির কারণে এই খাতে প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি দেশের অর্থনীতি ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তাই এ খাতে সরকারি ও বেসরকারি আরও বিনিয়োগ প্রয়োজন।