অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ১০ কোম্পানিতে ৫৫৯ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে ব্র্যাক ব্যাংক। যার সবকয়টি মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি হিসেবে বিবেচিত। যেসব শেয়ার রাতারাতি বাড়ে না এবং কমেও না। যে কারনে ওইসব শেয়ারে সবাই বিনিয়োগে আগ্রহী না। তবে ব্র্যাক ব্যাংকের ওইসব শেয়ারে গত ৩১ ডিসেম্বর আনরিয়েলাইজড (অবিক্রিত) গেইন দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি টাকা।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, আমাদের শেয়ারবাজারে অধিকাংশ বিনিয়োগকারী রাতারাতি মুনাফা করতে চায়। যে কারনে তারা আইটেমের পেছনে ছুটে। এটা ...

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ১০ কোম্পানিতে ৫৫৯ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে ব্র্যাক ব্যাংক। যার সবকয়টি মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি হিসেবে বিবেচিত। যেসব শেয়ার রাতারাতি বাড়ে না এবং কমেও না। যে কারনে ওইসব শেয়ারে সবাই বিনিয়োগে আগ্রহী না। তবে ব্র্যাক ব্যাংকের ওইসব শেয়ারে গত ৩১ ডিসেম্বর আনরিয়েলাইজড (অবিক্রিত) গেইন দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি টাকা।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, আমাদের শেয়ারবাজারে অধিকাংশ বিনিয়োগকারী রাতারাতি মুনাফা করতে চায়। যে কারনে তারা আইটেমের পেছনে ছুটে। এটা করতে গিয়ে অধিকাংশ বিনিয়োগকারী লোকসান গুনে। কিন্তু মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানিতে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করে লোকসানের সম্ভাবনা খুবই কম। এতে মুনাফা করা সহজ।

ব্র্যাক ব্যাংক থেকে বাটা সু, বার্জার পেইন্টস, ইস্টার্ন ব্যাংক, গ্রামীণফোন, লাফার্জহোলসিম, লিন্ডে বিডি, ম্যারিকো, রেনাটা, সিঙ্গার বাংলাদেশ ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসে ৫৫৮ কোটি ৮৫ লাখ ৮৬ হাজার টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করা হয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসে। এ কোম্পানিটিতে ব্র্যাক ব্যাংকের বিনিয়োগ ১৪৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা।

এরপরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে গ্রামীণফোনে। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ ৭৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে ম্যারিকো বাংলাদেশে।

এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, ব্যাংকটির পোর্টফোলিও দেখেই বোঝা যাচ্ছে, দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করে বিনিয়োগ করা হয়েছে। যেসব কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীসহ সব স্টেকহোল্ডারদের আস্থা অনেক বেশি। এছাড়া শেয়ারবাজারে আর্থিক হিসাবের অস্বচ্ছতার যে প্রধানতম একটি সমস্যা, তা ওই কোম্পানিগুলোতে নেই। তাই ওইসব কোম্পানিতে লোকসান করার সম্ভাবনা খুবই কম।

তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে হাতেগোণা কয়েকটি কোম্পানির আর্থিক হিসাবের উপর আস্থা রাখা যায়। এখনো বেশিরভাগ কোম্পানিতে নিরীক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যে কারনে মাঝেমধ্যে বিভিন্ন কোম্পানির এক বছর মুনাফা করার পরের বছর অস্বাভাবিক লোকসানের মতো আর্থিক হিসাব দেখতে হয়। এ জায়গাটিতে রেগুলেটররা স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারেননি।

আরও পড়ুন.....ঋণকে নগদ জমা দেখিয়ে পরিচালকদের নামে শেয়ার ইস্যু

ব্র্যাক ব্যাংকের ওই ৫৫৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকার বিনিয়োগের বাজার দর (৩১ ডিসেম্বর) দাঁড়িয়েছে ৫৬৯ কোটি ২১ লাখ টাকা। অর্থাৎ ব্যাংকটি ১০ কোটি ৩৫ লাখ টাকার আনরিয়েলাইজড মুনাফায় রয়েছে। তবে এই মুনাফা হিসাবে অন্তর্ভূক্ত করে দেখানো হয়নি।

এই ব্যাংকটির সুদজনিত আয়, বিনিয়োগজনিত আয় ও কমিশন আয় বৃদ্ধির কারনে আগের বছরের ৬১৪ কোটি ২০ লাখ টাকার নিট মুনাফা বেড়ে ২০২৩ সালে হয়েছে ৮২৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

আগের বছরে ব্যাংকটির নিট সুদজনিত আয় হয়েছিল ১ হাজার ৮৪১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। তবে ২০২৩ সালে এই আয় বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৫৪ কোটি ৮৯ কোটি টাকা। এছাড়া আগের বছরের ৭৫৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকার বিনিয়োগজনিত আয় বেড়ে ১ হাজার ২৬৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা এবং ১ হাজার ১৫২ কোটি ২১ লাখ টাকার কমিশনজনিত আয় বেড়ে ১ হাজার ৩০৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা হয়েছে।

ব্যাংকটির সুদজনিত আয় করতে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঋণ বিতরনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫২ হাজার ২৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এরমধ্যে ২০টি গ্রুপ অব প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে ১১ হাজার ৭১৭ কোটি ৬ লাখ টাকা।

ব্র্যাক ব্যাংক থেকে সবচেয়ে বেশি ঋণ দেওয়া হয়েছে আবুল খায়ের গ্রুপকে। এই গ্রুপে ব্র্যাক ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ (ফান্ডেড+নন ফান্ডেড) ৮১৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এরপরের অবস্থানে থাকা সিটি গ্রুপকে ৭৬৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা ও তৃতীয় সর্বোচ্চ সামিট গ্রুপকে ৬৯৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকার ঋণ দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, একটি ব্যাংক একক গ্রাহক বা গ্রুপকে মূলধনের ১০ শতাংশ ঋণ দিলে তা বড় ঋণ বা লার্জ লোন হিসেবে বিবেচিত হয়। আর ফান্ডেড ঋণ বলতে ব্যাংক থেকে সরাসরি টাকা দেওয়াকে বোঝায়। আর নন-ফান্ডেড বলতে এলসি, গ্যারান্টিসহ বিভিন্ন দায়কে বোঝানো হয়।

১৯৯৯ সালে যাত্রা শুরু করা ব্র্যাক ব্যাংকের ১৮৭টি শাখা ও ৪০টি উপশাখা রয়েছে। এছাড়া ১৯৮টি এরিয়া অফিস, ৪৫৭টি এসএমই ইউনিট অফিস, ৩২৯টি এটিএম বুথ ও ১০৯৪টি এজেন্ট আউটলেট রয়েছে।