অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এবি ব্যাংক থেকে ভূয়া ও অযোগ্য প্রতিষ্ঠানের নামে গ্রাহকদের আমানতের হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণের নামে আত্মসাৎ করা হয়েছে। যে কারনে ওইসব ঋণ এখন খেলাপি হয়ে গেছে। যাতে আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় গ্রাহকদের আমানত ঝুঁকিতে পড়েছে।

দেখা গেছে, ঋণের নামে টাকা আত্মসাতের কারনে ব্যাংকটির ২০২৪ সালে প্রায় ১৮ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা বা শেয়ারপ্রতি (২১০) টাকা লোকসান হয়েছে। তবে এ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ওই বছরের ব্যবসায় ...

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এবি ব্যাংক থেকে ভূয়া ও অযোগ্য প্রতিষ্ঠানের নামে গ্রাহকদের আমানতের হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণের নামে আত্মসাৎ করা হয়েছে। যে কারনে ওইসব ঋণ এখন খেলাপি হয়ে গেছে। যাতে আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় গ্রাহকদের আমানত ঝুঁকিতে পড়েছে।

দেখা গেছে, ঋণের নামে টাকা আত্মসাতের কারনে ব্যাংকটির ২০২৪ সালে প্রায় ১৮ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা বা শেয়ারপ্রতি (২১০) টাকা লোকসান হয়েছে। তবে এ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ওই বছরের ব্যবসায় ১ হাজার ৯০৬ কোটি টাকা বা শেয়ারপ্রতি (২১) টাকা লোকসান দেখিয়েছে।

ব্যাংকটির ২০২৪ সালের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

এ খাতের সংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশে গ্রাহকদের স্বল্পমেয়াদি আমানতকে ব্যাংকগুলো দীর্ঘমেয়াদে ঋণ দিয়ে থাকে। এটা খুবই বাজে সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। এর উপরে আবার রাজনৈতিক প্রভাবে ব্যাংক দখল করে এস.আলম-সালমান এফ রহমানদের মতো চক্র অস্তিত্বহীন ও অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যার মাধ্যমে গ্রাহকদের আমানতকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। এদের কারনে এখন অনেক ব্যাংক গ্রাহকদের আমানত দিতে পারছে না। যাতে আমানতকারীরা এখন অসহায়ের মতো ঘুরছে।

এবি ব্যাংকের ২০২৪ সালে শেয়ারপ্রতি (২১.২৮) টাকা করে নিট লোকসান দেখানো হয়েছে ১ হাজার ৯০৬ কোটি ৩ লাখ টাকা। আর নিট সম্পদ ৬৪৪ কোটি টাকা বা শেয়ারপ্রতি নিট ৭.১৯ টাকা সম্পদ দেখানো হয়েছে।

তবে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এ ব্যাংকটির ৩৩ হাজার ১৮৫ কোটি ২১ লাখ টাকার ঋণের মধ্যে ২৩ হাজার ২২৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা বা ৬৯.৯৯% খেলাপি। তবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দেখিয়েছে ২২ হাজার ২৭৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে আরও ৯৪৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকার অতিরিক্ত খেলাপি দেখানো দরকার।

এদিকে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের বিপরীতে ২০২৪ সালে ১৯ হাজার ৮৯৯ কোটি ৪০৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা প্রভিশন বা সঞ্চিতি দরকার ছিল। তবে এ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সঞ্চিতি করেছে ২ হাজার ৫৩১ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে সঞ্চিতি ঘাটতি ১৬ হাজার ৮৭৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা। যা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের মাধ্যমে পরবর্তীতে গঠন করার সুযোগ পেয়েছে ব্যাংকটি।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সুযোগ আন্তর্জাতিক হিসাব মানের সঙ্গে সামঞ্জসূপূর্ণ না। কারন ব্যাংকটিকে এখন সঞ্চিতি গঠন থেকে বিরত থাকার সুযোগ দিলেও ভবিষ্যতে ঠিকই করতে হবে। সেটার প্রভাব এখন না দেখিয়ে ভবিষ্যতে দেখানো হবে। এটা এক ধরনের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা।

হিসাব মান অনুযায়ি ব্যাংকটির ২০২৪ সালেই আরও ১৬ হাজার ৮৭৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা সঞ্চিতি গঠন করা দরকার ছিল। যা করা হলে ব্যাংকটির ওই বছরে ১৮ হাজার ৭৮০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি (২০৯.৬৮) টাকা লোকসান হতো।

এদিকে ওই প্রয়োজনীয় সঞ্চিতি ২০২৪ সালে গঠন করা হলে ব্যাংকটির নিট সম্পদ ঋণাত্মক ১৬ হাজার ২৩০ কোটি ৭২ লাখ টাকায় বা শেয়ারপ্রতি সম্পদ ১৮.১৬ টাকা থেকে কমে ঋণাত্মক (১৮১.২১) টাকায় নেমে আসতো।

আরও পড়ুন....

আইএফআইসি ব্যাংক ধংসের পথে : ঝুঁকিতে গ্রাহকদের আমানত

উল্লেখ্য, ১৯৮৩ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া এবি ব্যাংকের ৬৮.৭৯ শতাংশ মালিকানাই রয়েছে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন শ্রেণীর (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতিত) বিনিয়োগকারীদের হাতে। কোম্পানিটির শনিবার (১৬ আগস্ট) শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ৬.৫০ টাকায়।