সঞ্চিতি ঘাটতি ৬১৮৮ কোটি টাকা
শেয়ারপ্রতি ৪৯ টাকার লোকসান যেভাবে ১.০৯ টাকা মুনাফা

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রিমিয়ার ব্যাংক থেকেও গ্রাহকদের আমানতের হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণের নামে আত্মসাত করা হয়েছে। যার নেতৃত্ব দিয়েছে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান এইচ বি এম ইকবাল পরিবার। যেসব ঋণ এখন খেলাপি হয়ে গেছে। যা আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় সঞ্চিতি গঠন করা দরকার ছিল। যা না করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ২০২৪ সালের ব্যবসায় শেয়ারপ্রতি (৪৯) টাকার লোকসানকে ১.০৯ টাকা মুনাফা দেখিয়েছে।
দেখা গেছে, ঋণের নামে টাকা আত্মসাতের কারনে ব্যাংকটির ...
ইব্রাহিম হোসাইন (রেজোয়ান) : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রিমিয়ার ব্যাংক থেকেও গ্রাহকদের আমানতের হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণের নামে আত্মসাত করা হয়েছে। যার নেতৃত্ব দিয়েছে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান এইচ বি এম ইকবাল পরিবার। যেসব ঋণ এখন খেলাপি হয়ে গেছে। যা আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় সঞ্চিতি গঠন করা দরকার ছিল। যা না করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ২০২৪ সালের ব্যবসায় শেয়ারপ্রতি (৪৯) টাকার লোকসানকে ১.০৯ টাকা মুনাফা দেখিয়েছে।
দেখা গেছে, ঋণের নামে টাকা আত্মসাতের কারনে ব্যাংকটির ২০২৪ সালে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি বা শেয়ারপ্রতি (৪৯) টাকা লোকসান হয়েছে। তবে এ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ওই বছরের ব্যবসায় ১৩৪ কোটি টাকা বা শেয়ারপ্রতি ১.০৯ টাকা মুনাফা দেখিয়েছে।
ব্যাংকটির ২০২৪ সালের আর্থিক হিসাবে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ব্যাংক খাতের সংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশে গ্রাহকদের স্বল্পমেয়াদি আমানতকে ব্যাংকগুলো দীর্ঘমেয়াদে ঋণ দিয়ে থাকে। এটা খুবই বাজে সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। এর উপরে আবার রাজনৈতিক প্রভাবে ব্যাংক দখল করে সালমান এফ রহমান, এস.আলম, ইকবালদের মতো চক্র অস্তিত্বহীন ও অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যার মাধ্যমে গ্রাহকদের আমানতকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। এদের কারনে এখন অনেক ব্যাংক গ্রাহকদের আমানত দিতে পারছে না। যাতে আমানতকারীরা এখন অসহায়ের মতো ঘুরছে।
প্রিমিয়ার ব্যাংকের ২০২৪ সালে শেয়ারপ্রতি ১.০৯ টাকা করে নিট মুনাফা দেখানো হয়েছে ১৩৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। আর নিট সম্পদ ২ হাজার ৬৮০ কোটি ২৫ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি নিট ২১.৭৩ টাকা সম্পদ দেখানো হয়েছে।
তবে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এ ব্যাংকটির ২০২৪ সালে মোট ৮ হাজার ১১৪ কোটি ২ টাকা প্রভিশন বা সঞ্চিতি দরকার ছিল। তবে এ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সঞ্চিতি করেছে মাত্র ১ হাজার ৯২৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে সঞ্চিতি ঘাটতি ৬ হাজার ১৮৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। যা গঠন না করে অতিরঞ্জিত সম্পদ, মুনাফা ও ইক্যুইটি দেখানো হয়েছে। একইসঙ্গে দায় কম দেখানো হয়েছে।
তবে ব্যাংকটির অপর্যাপ্ত মুনাফার কারনে বাংলাদেশ ব্যাংক ওই সঞ্চিতি পরবর্তীতে গঠন করার সুযোগ দিয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সুযোগ আন্তর্জাতিক হিসাব মানের সঙ্গে সামঞ্জসূপূর্ণ না। কারন ব্যাংকটিকে এখন সঞ্চিতি গঠন থেকে বিরত থাকার সুযোগ দিলেও ভবিষ্যতে ঠিকই এই বিশাল পরিমাণের সঞ্চিতি করতে হবে। সেটার প্রভাব এখন না দেখিয়ে ভবিষ্যতে দেখানো হবে। এটা এক ধরনের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা।
হিসাব মান অনুযায়ি ব্যাংকটির ২০২৪ সালেই আরও ৬ হাজার ১৮৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা সঞ্চিতি গঠন করা দরকার ছিল। যা করা হলে ব্যাংকটির ওই বছরে ৬ হাজার ৫৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি (৪৯) টাকা লোকসান হতো।
এদিকে ওই প্রয়োজনীয় সঞ্চিতি ২০২৪ সালে গঠন করা হলে ব্যাংকটির নিট সম্পদ ২ হাজার ৬৮০ কোটি ২৫ লাখ টাকা থেকে কমে ঋণাত্মক ৩ হাজার ৫০৭ কোটি ৫১ লাখ টাকায় বা শেয়ারপ্রতি সম্পদ ২১.৭৩ টাকা থেকে কমে ঋণাত্মক (২৮) টাকায় নেমে আসতো।
আরও পড়ুন....
ঝুঁকিতে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবসা : অনিশ্চিত গ্রাহকদের আমানত
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১ হাজার ২৩৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এরমধ্যে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন শ্রেণীর (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতিত) বিনিয়োগকারীদের মালিকানা ৭৬.০৮ শতাংশ। কোম্পানিটির মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ৬.৪০ টাকায়।