ঢাকা, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০ ভাদ্র ১৪৩২

ঋণের নামে ৭০ হাজার কোটি টাকা পাঁচার

ঝুঁকিতে ব্যবসা : অনিশ্চিত গ্রাহকদের আমানত

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৪ ০৯:৩০:৫৪
ঝুঁকিতে ব্যবসা : অনিশ্চিত গ্রাহকদের আমানত

ইব্রাহিম হোসাইন (রেজোয়ান) : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ইসলামী ব্যাংক থেকে গ্রাহকদের আমানতের হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণের নামে আত্মসাত করেছে এস.আলম চক্র। যেসব ঋণ এখন খেলাপি হয়ে গেছে। যাতে আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় গ্রাহকদের আমানত ঝুঁকিতে পড়েছে। ব্যাংকটির এতোটাই অর্থ আত্মসাত করা হয়েছে যে, যাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা ছাড়া ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই হুমকিতে পড়েছে।

দেখা গেছে, ঋণের নামে টাকা আত্মসাতের কারনে ব্যাংকটির ২০২৪ সালে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা বা শেয়ারপ্রতি (৪৩৩) টাকা লোকসান হয়েছে। তবে এ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ওই বছরের ব্যবসায় ১০৯ কোটি টাকা বা শেয়ারপ্রতি ০.৬৮ টাকা মুনাফা দেখিয়েছে।

ব্যাংকটির ২০২৪ সালের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

এ খাতের সংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশে গ্রাহকদের স্বল্পমেয়াদি আমানতকে ব্যাংকগুলো দীর্ঘমেয়াদে ঋণ দিয়ে থাকে। এটা খুবই বাজে সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। এর উপরে আবার রাজনৈতিক প্রভাবে ব্যাংক দখল করে এস.আলমদের মতো চক্র অস্তিত্বহীন ও অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যার মাধ্যমে গ্রাহকদের আমানতকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। এদের কারনে এখন অনেক ব্যাংক গ্রাহকদের আমানত দিতে পারছে না। যাতে আমানতকারীরা এখন অসহায়ের মতো ঘুরছে।

ইসলামী ব্যাংকের ২০২৪ সালে শেয়ারপ্রতি ০.৬৮ টাকা করে নিট মুনাফা দেখানো হয়েছে ১০৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। আর নিট সম্পদ ৭ হাজার ১৪১ কোটি ৯২ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি নিট ৪৪.৩৬ টাকা সম্পদ দেখানো হয়েছে।

তবে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এ ব্যাংকটির ২০২৪ সালে মোট ৭৬ হাজার ৭১৫ কোটি ৮৮ টাকা প্রভিশন বা সঞ্চিতি দরকার ছিল। তবে এ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সঞ্চিতি করেছে মাত্র ৬ হাজার ৯৪৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে সঞ্চিতি ঘাটতি ৬৯ হাজার ৭৭০ কোটি ৯০ লাখ টাকা। যা গঠন না করে অতিরঞ্জিত সম্পদ, মুনাফা ও ইক্যুইটি দেখানো হয়েছে। একইসঙ্গে দায় কম দেখানো হয়েছে।

তবে ব্যাংকটির অপর্যাপ্ত মুনাফার কারনে বাংলাদেশ ব্যাংক ওই সঞ্চিতি পরবর্তীতে গঠন করার সুযোগ দিয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সুযোগ আন্তর্জাতিক হিসাব মানের সঙ্গে সামঞ্জসূপূর্ণ না। কারন ব্যাংকটিকে এখন সঞ্চিতি গঠন থেকে বিরত থাকার সুযোগ দিলেও ভবিষ্যতে ঠিকই এই বিশাল পরিমাণের সঞ্চিতি করতে হবে। সেটার প্রভাব এখন না দেখিয়ে ভবিষ্যতে দেখানো হবে। এটা এক ধরনের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা।

হিসাব মান অনুযায়ি ব্যাংকটির ২০২৪ সালেই আরও ৬৯ হাজার ৭৭০ কোটি ৯০ লাখ টাকা সঞ্চিতি গঠন করা দরকার ছিল। যা করা হলে ব্যাংকটির ওই বছরে ৬৯ হাজার ৬৬১ কোটি ৪২ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি (৪৩৩) টাকা লোকসান হতো।

এদিকে ওই প্রয়োজনীয় সঞ্চিতি ২০২৪ সালে গঠন করা হলে ব্যাংকটির নিট সম্পদ ৭ হাজার ১৪১ কোটি ৯২ লাখ টাকা থেকে কমে ঋণাত্মক ৬২ হাজার ৬২৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকায় বা শেয়ারপ্রতি সম্পদ ৪৪.৩৬ টাকা থেকে কমে ঋণাত্মক (৩৮৯) টাকায় নেমে আসতো।

এই মন্দাবস্থার মধ্যে ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ব্যাংকের আনুকূল্য বিবেচনায় ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবে বলে মনে করছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা ছাড়া ইসলামী ব্যাংকের ব্যবসা পরিচালনা করা হুমকির মুখে পড়তে হবে বলে জানিয়েছে নিরীক্ষক।

এসব বিষয়ে ইসলামী ব্যাংকের দাবি, এই ঋণগুলির মধ্যে অনেকগুলি আসলে আগেই খেলাপি হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু নিরীক্ষক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন দল ২০২৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে খেলাপি হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করেছে। আর তারা প্রায় ২০,০০০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ উদ্ধার করেছে। অতএব, বর্তমানে ব্যাংকের ব্যবসা পরিচালনায় কোনও হুমকি নেই।

আরও পড়ুন....

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক থেকে ১১ হাজার কোটি টাকা আত্মসাত

উল্লেখ্য, ১৯৮৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ইসলামী ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১ হাজার ৬০৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। এরমধ্যে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন শ্রেণীর (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতিত) বিনিয়োগকারীদের মালিকানা ৯৯.৮১ শতাংশ। কোম্পানিটির শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ৪১.৩০ টাকায়।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে