ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫, ২২ কার্তিক ১৪৩২

পাঁচ ব্যাংকে বিনিয়োগকারীরা নিঃশ্ব, চেয়ে চেয়ে দেখল মাকসুদের ‘শাস্তি কমিশন’

২০২৫ নভেম্বর ০৬ ০৯:২২:০১
পাঁচ ব্যাংকে বিনিয়োগকারীরা নিঃশ্ব, চেয়ে চেয়ে দেখল মাকসুদের ‘শাস্তি কমিশন’

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৫টি ব্যাংক একীভূতকরনের লক্ষ্যে অকার্যকর করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যে ব্যাংকগুলোতে শেয়ারহোল্ডাররা কিছু পাবে না বলে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে গভর্ণর। এ প্রক্রিয়াটি দীর্ঘদিন ধরে চলতে চলতে বুধবার (০৫ নভেম্বর) চূড়ান্ত করা হয়েছে। এসময় বিনিয়োগকারীদেরকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিঃশ্ব করে দেওয়ার প্রক্রিয়াটি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেছে খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। যে কমিশন বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে কিছু করতে না পারলেও শাস্তি দিতে পারার কারনে ‘শাস্তি কমিশন’ হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছে।

রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন ব্যর্থ কমিশন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বিএসইসিতে দায়িত্ব গ্রহণের পরে নিজেদেরকে শুধুমাত্র শাস্তি প্রদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছে। যাদের কাজই কমিশন সভা করে বিগত সরকারের ককেয়জনকে শাস্তি দেওয়া। যারা এক প্রকার এখন মৃত অবস্থায় আছে। এছাড়া শেয়ারবাজারের উন্নয়নে কোন কাজই করতে পারেনি এই কমিশন। তাই এই কমিশন দায়িত্ব গ্রহনের ১৫ মাসে বিনিয়োগকারীরা শুধুই হারিয়েছে।

বিগত সরকারের আমলে ব্যাংক খাতকে লুটপাটের কেন্দ্রস্থল বানিয়েছিল এস.আলম, সালমান এফ রহমান, নজরুল ইসলাম, পারভেজ তমালরা। এতে করে লাখ লাখ কোটি টাকার আমানত ঝুঁকিতে পড়েছে। এখন অনেক ব্যাংক গ্রাহকদের আমানত ফেরত দিতে পারছেন না। এই অবস্থায় আমানতকারীদের স্বার্থ উদ্ধারে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে এবং নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যার ধারাবাহিকতায় ৫টি ব্যাংক অকার্যকর করা হয়েছে। তবে ওইসব ব্যাংকের মালিক বা শেয়ারহোল্ডারদেরকে নিয়ে ভাবনা নেই কারো। যেখানে হাজার হাজার সাধারন বিনিয়োগকারীর মালিকানা রয়েছে। তারাও আমানতকারীদের মতো ক্ষতির মূখে। তাদের স্বার্থ রক্ষায় শেয়ারবাজারের রেগুলেটর হিসেবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) এগিয়ে আসা দায়িত্ব হলেও দর্শক ভূমিকায় রয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। এই প্রতিষ্ঠানটির প্রধান দায়িত্ব বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা। কিন্তু তারা আবুল খায়ের হিরু, সালমান এফ রহমান, সাকিব আল হাসানসহ কয়েকজনকে আর্থিক শাস্তি দেওয়ার মধ্যে নিজেদের কর্মকান্ড আবদ্ধ করে রেখেছে। তারপরেও ১ টাকা আদায় করতে পারছে না। শুধুমাত্র কাগজে কলমে শাস্তির মধ্যে আটকে আছে।

আরও পড়ুন...শেয়ারবাজারে ৫ ব্যাংকের লেনদেন বাতিল

এ বিষয়ে ডিএসইর এক পুরাতন ব্রোকার অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, ‘শাস্তি কমিশন’ শাস্তিটাও ঠিকমতো দিচ্ছে না। তারা শাস্তি প্রদানে আইনের সঠিক প্রয়োগ করছে না। যাকে যেমন খুশি শাস্তি দিয়ে দিচ্ছে, সেটা কার্যকর করতে না পারলেও। এই অযৌক্তিক শাস্তি একসময় বিএসইসির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। কারন বিএসইসির শাস্তির বিষয়ে সবাই আদালতে যাবে। সেখানে এগুলো টিকবে না। তবে বিএসইসির আর্থিক খরচ ও সময় ব্যয় ঠিকই হবে।

অথচ বিনিয়োগকারীদের ব্যাংকগুলো থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা লুট হয়ে গেছে। এখন ওইসব ব্যাংকের আমানতকারীদের ন্যায় বিনিয়োগকারীরাও পথের ফকির। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক আমানতকারীদের অর্থ ফেরতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। এরমধ্যে ৫টি ব্যাংক একীভূত করা চূড়ান্ত করা হয়েছে। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ উদ্ধার এক্ষেত্রে উপেক্ষিত। এছাড়া বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ দেখা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজ না। এর মূল দায়িত্ব বিএসইসির।

একীভূত হতে যাওয়া শরিয়াহভিত্তিক ৫ ব্যাংক হলো—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক। ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলোতে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

সবগুলোই শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক। অর্থাৎ ব্যাংকগুলোতে হাজার হাজার বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ বা মালিকানা রয়েছে। আমানতকারীদের ন্যায় তারাও এরইমধ্যে ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ৫টি ব্যাংকের শেয়ার দরই অনেক তলানিতে ছিল। এরমধ্যে বিনিয়োগকারীদের জন্য বিএসইসি কিছু করতে না পারলেও বৃহস্পতিবার থেকে লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছে। এতে করে ব্যাংকগুলোতে বিনিয়োগকারদের যাই কিছু ছিল, তার সবই নাই হয়ে গেল।

নিম্নে একীভুত হতে যাওয়া ব্যাংকগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরা হল-

ব্যাংকের নাম

পরিশোধিত মূলধন

সাধারন বিনিয়োগকারীদের মালিকানা

শেয়ার দর (টাকা)

ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক

১২০৮.১৪ কোটি টাকা

৯৪.১০%

১.৯০

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক

১১৪০.১৬ কোটি টাকা

৮৮.৩৮%

৩.০০

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক

৯৮৭.৪৪ কোটি টাকা

৮৪.৫৭%

১.৭০

ইউনিয়ন ব্যাংক

১০৬২.২৮ কোটি টাকা

৪৫.৫১%

১.৫০

এক্সিম ব্যাংক

১৪৪৭.৫৬ কোটি টাকা

৬৭.৫৬%

৩.০০

মোট

৫৮৪৫.৫৮ কোটি টাকা

.

গড়-২.২২

একীভূত হওয়ার পর ব্যাংকের নাম হবে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক। তবে একীভূত হওয়ার পর এটাই হবে দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক। এর জন্য আনুমানিক ৩৫,২০০ কোটি টাকা মূলধনের প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে ২০,২০০ কোটি টাকা সরকার দেবে এবং বাকি ১৫,০০০ কোটি টাকা প্রাতিষ্ঠানিক তহবিল ও প্রাতিষ্ঠানিক আমানত রূপান্তরের মাধ্যমে আসবে।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে