ঢাকা, বুধবার, ৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১

আর্থিক হিসাবে ৬০ কোটি টাকার মজুদ পণ্য : সরেজমিনে ৪১ কোটি টাকারই ভূয়া

২০২৩ ডিসেম্বর ১৪ ০৯:৪৯:১৫
আর্থিক হিসাবে ৬০ কোটি টাকার মজুদ পণ্য : সরেজমিনে ৪১ কোটি টাকারই ভূয়া

শেয়ারবাজারে দূর্বল কোম্পানি খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ। এরমধ্যে আবার কোম্পানি কর্তৃপক্ষ নিজেদের মতো করে ভূয়া তথ্য দিয়ে আর্থিক হিসাব তৈরী করে। যে কোম্পানিটি গত কয়েক বছর ধরে লোকসানে নিমজ্জিত রয়েছে। এরমধ্যেও দু-একবার শেয়ার কারসাজির স্বার্থে নামমাত্র লভ্যাংশ দিয়েছে। তবে সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরের ব্যবসায় সম্প্রতি কোন লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারপরেও কোম্পানিটির শেয়ার দর অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে।

কোম্পানিটির ২০২২-২৩ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় নিরীক্ষক জানিয়েছেন, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আর্থিক হিসাবে ৫৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকার কাঁচামাল ও ৪ কোটি ৪১ লাখ টাকার বিক্রিযোগ্য মজুদ পণ্য দেখিয়েছে। এই মোট ৫৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকার মজুদ পণ্য গত কয়েক বছর ধরে দেখিয়ে আসছে। কিন্তু সরেজমিনে সত্যতা যাচাই অনেক ঘাটতি পেয়েছেন নিরীক্ষক। যেখানে ৪০ কোটি ৭০ লাখ টাকার ঘাটতি পেয়েছে নিরীক্ষক। অর্থাৎ কোম্পানির সম্পদ হিসাবে দেখানো ৫৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকার মধ্যে ৪০ কোটি ৭০ লাখ টাকাই ভূয়া।

এই ভূয়া মজুদ পণ্যের মাধ্যমে নিট লোকসান কম দেখিয়েছে খান ব্রাদার্স কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে মজুদ পণ্য, নিট সম্পদ এবং সংরক্ষিত আয় (রিটেইন আর্নিংস) বেশি দেখিয়েছে।

অনিয়মের বিষয়ে শেয়ারাবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহি পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, অর্থবছর শেষে নিরীক্ষকের মতামতসহ তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বার্ষিক প্রতিবেদন কমিশনে আসে। যা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ যাচাই-বাছাই করে। এতে কোন অনিয়ম বা অসঙ্গতি পেলে, কমিশন আইন অনুযায়ি ব্যবস্থা গ্রহণ করে। খান ব্রাদার্সেও তার ব্যতিক্রম হবে না।

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, কোম্পানিটির আর্থিক হিসাবে রপ্তানির বিপরীতে বিল পাওনা হিসেবে ৬ কোটি ২২ লাখ টাকার সম্পদ দেখানো হয়েছে। যা ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে দেখিয়ে আসা হচ্ছে। যে পাওনার কোন অংশ আদায় বা সমাধান হয়নি। তারপরেও সঞ্চিতি (প্রভিশনিং) গঠন করেনি খান ব্রাদার্স কর্তৃপক্ষ।

ধংসের পথে থাকা এই কোম্পানিটি থেকে ৩ কোটি টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করা হয়েছে দেউলিয়া লিজিং কোম্পানি পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসে। যা দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক হিসাবে সম্পদ দেখিয়ে আসা হচ্ছে। কিন্তু এই লিজিং কোম্পানিটির আর্থিক কেলেঙ্গারীর বিষয়ে দেশের ও বিদেশের মানুষ জানে। যার পক্ষে ডিপোজিটরদের টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব না। তারপরেও খান ব্রাদার্স কর্তৃপক্ষ তাদের ফিক্সড ডিপোজিটের বিপরীতে প্রভিশনিং গঠন করেনি বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক।

খান ব্রাদার্স কর্তৃপক্ষ ভ্যাট আইন ২০১২, রুল ২০১৬ এবং আয়কর আইন ২০২৩ অনুযায়ি, সাব কন্ট্রাক্ট থেকে আয়ের বিপরীতে ভ্যাট অ্যান্ড এআইটি প্রদান করেনি বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক। এক্ষেত্রে খান ব্রাদার্স কর্তৃপক্ষ ১ কোটি ৫১ লাখ টাকার ভ্যাট দেয়নি। যার মাধ্যমে প্রকৃত আর্থিক হিসাব প্রকাশ করা হয়নি এবং আইন ভঙ্গ করা হয়েছে।

এই কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত শ্রম আইন অনুযায়ি, এমপ্লয়ী প্রভিডেন্ড ফান্ড ও গ্র্যাচ্যুইটি চালু করেনি বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক।

২০১৪ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া খান ব্রাদার্সের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৯৮ কোটি ৮ লাখ টাকা। এরমধ্যে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন শ্রেণীর (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতিত) বিনিয়োগকারীদদের মালিকানা ৬৯.৮৭ শতাংশ। কোম্পানিটির বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) লেনদেন শেষে শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ৮৭.৫০ টাকায়।

যে শেয়ারটির দর গত ১৮ সেপ্টেম্বর ছিল ১৯.৯০ টাকায়। যেখান থেকে ৩ মাসের ব্যবধানে ৮৭.৫০ টাকায় উঠে এসেছে। এক্ষেত্রে শেয়ার দর বেড়েছে ৬৭.৬০ টাকা বা ৩৪০ শতাংশ। যার পেছনে কোন যৌক্তিক কারণ খুঁজে পায়নি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ।

বি:দ্র: খান ব্রাদার্সের আরও অনিয়ম নিয়ে পরবর্তী পর্বে তুলে ধরা হবে।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে