ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ৩১ চৈত্র ১৪৩২

উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুন, ফিরেছে মুনাফায়

২০২৪ মে ১৩ ১৮:১৪:০৯
উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুন, ফিরেছে মুনাফায়

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : অগ্নীকাণ্ডে কারখানা পুড়ে ছাঁই হয়ে যাওয়া এবং ধারাবাহিক লোকসানের কারণে পুঁজিবাজারে তালিকভুক্ত ফার গ্রুপের দুই কোম্পানির ভবিষৎ সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। এর মধ্যে অগ্নীকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির কারণে আরএন স্পিনিং মিলসের উৎপাদন থেকে শুরু করে সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। আরেক কোম্পানি ফার কেমিক্যাল এন্ড টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজও দীর্ঘবছর ধরে লোকসান গুনছিল। এমন পরিস্থিতিতে গ্রুপের অপর দুই কোম্পানি সামিন ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজ এন্ড টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড এবং এসএফ টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সঙ্গে তালিকাভুক্ত এ দুই কোম্পানিকে একীভুতকরণের (মার্জ) সিদ্ধান্ত নেয় গ্রুপ সংশ্লিষ্টরা। মূলত তালিকাভুক্ত কোম্পানি দুটিকে লোকসান থেকে ফেরাতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যার সুফল এরই মধ্যে দৃশ্যমান। লোকসান থেকে মুনাফার পথে হাটছে কোম্পানি দুটি।

গত শনিবার দেশের কয়েকটি গণমাধ্যমের বেশ কিছু সংবাদকর্মী সরেজমিনে কোম্পানির গাজীপুরে অবস্থিত কারখানা পরিদর্শনে এমন চিত্র দেখতে পাওয়া যায়।

পরিদর্শনকালে মার্জ হওয়া আর.এন স্পিনিং কোম্পানিটির ১ হাজার ১৭১ দশমিক ৮৮ ডেসিমেল আয়তনের কারখানা ও উৎপাদন কার্যক্রম সচল থাকার চিত্র দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া কারখানায় বিদ্যমান মেশিনারিজের ওপর স্টিকার দেখে তা জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, ইতালি, চায়না ও ইন্ডিয়া থেকে আমদানি হওয়া মেশিনারিজ হিসেবে তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়। একইসঙ্গে কারখানায় আমদানিকৃত কাঁচামাল ও পণ্যের মজুদ দেখতে পায়।

কারখানার কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মার্জ হওয়া এ কোম্পানিটিতে তারা রোস্টার অনুসারে ৩ শিফটে ডিউটি করেন। ২৪ ঘন্টা কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম সচল থাকে। কোন মেশিনে তাৎক্ষনিক সমস্যা তৈরি না হলে সবগুলো মেশিনই চালু থাকে। পরিদর্শন শেষে সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে আরএন স্পিনিংয়ের ম্যানেজার (মার্কেটিং বিভাগ) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, পুড়ে যাওয়া আরএন স্পিনিংয়ের কার্যক্রম পুনরায় চালু হওয়া নিয়ে অনিশ্চতা দেখা দেয়ায় আমরা কোম্পানিটিকে মার্জ করেছি। এটা নিশ্চয়ই বিনিয়োগকারীদের অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি দিতে ভালো সিদ্ধান্ত। বর্তমানে মার্জ হওয়া কোম্পানিটিতে আমাদের উৎপাদন সক্ষমতা রযেছে ৭৯ হাজার ৮৪৮ স্পেন্ডিল। প্রতি বছর যেখানে ১ কোটি ৭৫ লাখ কেজি সুতা উৎপাদন সম্ভব। আমাদের এ কারখানায় প্রায় ১৬০০ কর্মী কাজ করেন। এটি শতভাগ বিদ্যুৎ চালিত কারখানা। আর আমাদের পণ্যও শতভাগ রপ্তানিমুখী। নিরবিচ্ছিন্নভাবে ২৪ ঘন্টা আমাদের সবগুলো মেশিন চালু থাকে।

এদিকে নারায়নগঞ্জে অবস্থিত ফার কেমিক্যালের সঙ্গে মার্জ হওয়া এসএফ টেক্সটাইলও সরেজমিনে পরিদর্শনে যায় সাংবাদিকরা। এ কারখানা দুটিতেও মেশিনারিজ, আমদানিকৃত কাঁচামাল এবং মজুদ পণ্য দেখতে পায় সাংবাদিকদের টিম। এছাড়া এ কারখানা দুটিতেও সবগুলো মেশিন চালু ও উৎপাদনে পাওয়া যায়।

এ কারখানা দুটি পরিদর্শন শেষে ফার কেমিক্যালের জেনারেল ম্যানেজার আবু তালহা সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে বলেন, মার্জ হওয়ার ফলে এখন আমাদের উৎপাদন সক্ষমতা ৩৩ হাজার ৬০০ স্পেন্ডিল থেকে বেড়ে ৭৫ হাজার ৮৫০ স্পেন্ডিলে দাঁড়িয়েছে। আর প্রতিবছর সুতা উৎপাদনের সম্ভাবনা ৬৩ লাখ কেজি থেকে ১ কোটি ৪৬ লাখ কেজিতে উন্নিত হয়েছে। বর্তমানে আমাদের কারখানা দুটির সর্বমোট ১ হাজার ১২৪ দশমিক ৫৮ ডেসিমেল আয়তন রয়েছে। দুই কারখানায় প্রায় সাড়ে ১৬০০ কর্মী রোস্টার অনুসারে ২৪ ঘন্টা কাজ করেন। শতভাগ বিদ্যুৎ চালিত কারখানা দুটির পণ্যও শতভাগ রপ্তানিমুখী।

একীভুত হওয়া কোম্পানির বিষয়ে ফার গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের ফারুক বলেন, প্রথমে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) একটি কমিটি সরেজমিনে আমাদের এসএফ টেক্সটাইল ও সামিন ফুড এন্ড বেভারেজ ইন্ডাস্টিজ এন্ড টেক্সটাইল মিলসের কারখানা পরিদর্শন করে বিএসইসিকে সন্তোষজনক তদন্ত প্রতিবেদন দেয়। পরে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) করে মার্জ হওয়ার বিষয়ে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আদালতের নির্দেশনা অনুসারে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কোম্পানি দুটিকে মার্জ করা হয়েছে।

কোম্পানির সুনাম ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্থ করার জন্য একটি মহল নেতিবাচক প্রচারনা চালাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে কোম্পানির বিরুদ্ধে বিএসইসি ও শেয়ারহোল্ডারদের কোন অভিযোগ নেই। এ মার্জের ফলে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হবেন। কোম্পানির ব্যবসা ও মুনাফা বৃদ্ধি পাবে।

এ বিষয়ে ফার গ্রুপের ম্যানেজার (অ্যাকাউন্টস, ফাইন্যান্স এবং কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স) সুদীপ বণিক বলেন, মার্জ হওয়ার আগে তালিকাভুক্ত দুই কোম্পানিই লোকসানে ছিল। আর মার্জ হওয়ার পর এরই মধ্যে ৯ মাসে আমরা মুনাফায় ফিরতে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি, আগামী দিনগুলোতে মার্জ হওয়া দুই কোম্পানিই অনেক ভালো মুনাফা অর্জনে সক্ষম হবে।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে