ঢাকা, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২

বিএসইসিতে অনৈতিকতার নজির গড়লেন কমিশনার মোহসিন

২০২৫ মে ১১ ০৮:৩২:২৮
বিএসইসিতে অনৈতিকতার নজির গড়লেন কমিশনার মোহসিন

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার মো. মোহসিন চৌধুরী দেশের শেয়ারবাজারে কেলেঙ্কারির নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। বিধান লঙ্ঘন করে নিজ নামে শেয়ার ব্যবসার মাধ্যমে এই ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। এতদিন বিএসইসির জুনিয়র পর্যায়ের কর্মকর্তাদের শেয়ার লেনদেন নিয়ে আলোচনা হলেও কমিশনারের নামে এই অনিয়ম হয়নি।

বর্তমানে মোহসিন বিএসইসির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কর্মকর্তা এবং গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলোর দায়িত্বে আছেন। তার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) আওতাধীন ‘জিরো ওয়ান লিমিটেড’ নামে একটি ব্রোকারেজ হাউজে তার সক্রিয় বিও অ্যাকাউন্টের তথ্য মিলেছে। ওই বিও অ্যাকাউন্ট নম্বর ১২০৪১৫০০৭৪৫১৮৭৩৪। ট্রেডিং কোড (ব্রোকারেজ হাউজে লেনদেনের সংক্ষিপ্ত নম্বর) ৪৬৩।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, বর্তমানে তার (মো. মোহসিন চৌধুরী) ওই অ্যাকাউন্টে বাজারে সবচেয়ে বিতর্কিত কোম্পানি বেক্সিমকো লিমিটেডের ২ হাজার ২৩১টি শেয়ার আছে। বেক্সিমকো ছাড়াও আরও ৮টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন করেছেন তিনি।

অথচ ২০১১ সালের ১১ এপ্রিল, বিএসইসি থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘কমিশনের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী নিজ বা স্বামী/স্ত্রী, পিতা-মাতা, ছেলেমেয়ে ও পোষ্যদের নামে প্রাইমারি বা সেকেন্ডারি মার্কেটে সিকিউরিটিজ লেনদেন করতে কিংবা উক্ত প্রকার লেনদেনে কোনো ভাবে সম্পৃক্ত থাকতে পারবেন না। পরবর্তীতে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ ১৯৯৩ (সংশোধিত) ইনসাইডার ট্রেডিং আওতায় আনা হয়। কিন্তু কোনো কিছুই আমলে নেননি তিনি। জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বিএসইসির কর্মকর্তারা শেয়ার লেনদেন করতে পারেন না। ঘটনা সত্য হলে তা গর্হিত কাজ। বিষয়টি তদন্ত করে সরকারের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

আরও পড়ুন.....

ফ্যাসিস্ট সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছে মোহসিন- বিএসইসির কর্মকর্তাদের অভিযোগ

ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে শেয়ার সংরক্ষণকারী কোম্পানি সিডিবিএলের তথ্য অনুসারে মোহসিন চৌধুরীর বিও অ্যাকাউন্ট রয়েছে সিএসইর ব্রোকারেজ হাউজ ‘জিরো ওয়ান লিমিটেডে’। রহিমস প্লাজা, স্মার্ট হাব ষষ্ঠ তলা, জাকির হোসেন রোড, খুলশি চট্টগ্রাম। ব্রোকারেজ হাউজের রেজিস্ট্রেশন নম্বর-৩.২/সিএসই-১০৪/২০২০/৩৩২। বিও অ্যাকাউন্টে মোহসিন চৌধুরীর তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে, জন্ম তারিখ ৬ জুলাই ১৯৬৪, পেশা : সার্ভিস, পিতা : নুরুল আলম চৌধুরী, মাতা খালেদা বেগম ঠিকানা-১০৭, গরিবুল্লাহ শাহ হাউজিং সোসাইটি, খুলশি চট্টগ্রাম। জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ৭৭৭১৫১৫৩৫৫। ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, শান্তিনগর শাখা, অ্যাকাউন্ট নম্বর ১০৮১৫১০০২৬২৯৯। তবে টিআইএনের (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর) জায়গা ফাঁকা রাখা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বর্তমানে তার অ্যাকাউন্টে বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ার রয়েছে। অপরদিকে ৫ আগস্টের পর সব কোম্পানি থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নিলেও বেক্সিমকো এখনো আছে ফ্লোর প্রাইস। বেক্সিমকো ছাড়াও তার এই অ্যাকাউন্টে তিনি আরও ৮টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন করেছেন। এগুলো হলো-নাভানা ফার্মা, জেএমআই হাসপাতাল অ্যান্ড মেডিকেল ইক্যুইপমেন্ট, মেঘনা ইন্স্যুরেন্স, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, চাটার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সিকদার ইন্স্যুরেন্স এবং ট্রাস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেন করেছেন। তবে বর্তমানে এসব শেয়ার তার অ্যাকাউন্টে নেই।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৮ মে মোহসিন চৌধুরীকে ৪ বছরের জন্য কমিশনার হিসাবে নিয়োগ দেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সে হিসাবে ২০২৮ সালের ৭ মে পর্যন্ত তার মেয়াদ। এর আগে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত তিনি কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সাবেক কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) মুসলিম চৌধুরীর আপন ছোট ভাই। ৫ আগস্টের পর অন্যান্য কমিশনারদের বিদায় নিতে হলেও অদৃশ্য ক্ষমতার জোরে স্বপদে বহাল আছেন মোহসিন চৌধুরী। ২০২৪ সালের ১১ আগস্ট বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম পদত্যাগ করলে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত মোহসিন চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে