ঢাকা, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

স্টক এক্সচেঞ্জের কাঠামো সম্পূর্ণরুপে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে

২০২৪ আগস্ট ১২ ১৫:২৭:০২
স্টক এক্সচেঞ্জের কাঠামো সম্পূর্ণরুপে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কয়েকজনের ব্যাক্তিগত স্বার্থ রক্ষার্থে গত ১৪ বছর ধরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সমস্ত সুশাসন এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো সম্পূর্ণরুপে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। এমনকি ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন বাস্তবায়নে বিদ্যমান ট্রেকগুলোর ইস্যুতে যথাযথ নিয়মনীতি অনুসরণ করা হয়নি। এক্ষেত্রে বিএসইসি থেকে অনৈতিক চাপ প্রয়োগ করা হয়।

সোমবার (১২ আগস্ট) ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর (ডিবিএ) সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়।

এতে ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ২০১১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৪ বছর ধরে ড. এম. খাইরুল হোসেন ও অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা উভয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশা থেকে এসে এই পদে আসীন হন। এই দীর্ঘ সময়ে তাদের অপেশাদার এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফলে বাজারের কোনো উন্নতি হয়নি বরং বিনিয়োগকারীদের আস্থা তলানিতে এসে পৌঁছায়।

তিনি বলেন, ২০১০ সালের বাজার পতনের পর ড. এম. খাইরুল হোসেন ও অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বাজারে ইনসাইডার ট্রেডিং বন্ধ করা, কারসাজি রোধে বাজারে স্বচ্ছতা, সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, ভাল মানের আইপিও এনে বাজারে বিনিয়োগকারীর আস্থা ফিরিয়ে আনা, প্লেসমেন্ট বাণিজ্যের ন্যায় ভয়াবহ অরাজকতা বন্ধ করা, কোম্পানির নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার যে অঙ্গীকার নিয়ে তারা বাজারের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তা পূরণে তারা ব্যর্থ হয়েছেন। শুধু তাই নয়, অত্যান্ত পরিতাপের বিষয় প্রতিটা অনিয়মে তাদের ব্যাক্তিগত সম্পৃক্ততা পরিলক্ষিত হয়েছে।

আইপিওর নামে গত ১৪ বছরে যে পরিমাণ দুর্নীতি ও অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আইপিওর মাধ্যমে বাজারে অনুপযুক্ত, দুর্বল, মানহীন, দেউলিয়াগ্রস্ত কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, "ফ্লোর প্রাইস" নামক একটি অদ্ভূত নিয়ম আমাদের বাজারে আরোপ করা হয়েছে। এই "ফ্লোর প্রাইস" শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ে বাধা সৃষ্টি করে এবং বাজারের স্বাভাবিক লেনদেন ও বিনিয়োগকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। শেয়ার দরের ফ্লোর প্রাইস একটি অযৌক্তিক ও ক্ষতিকর নিয়ম হিসেবে বিনিয়োগকারীদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেছে। এই নিয়মের কারণে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীর একটি বড় অংশ আমাদের বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। পরবর্তীতে "ফ্লোর প্রাইস" তুলে দিলে বাজার কিছুদিনের জন্য ভাল হয়, কিন্তু পুনরায় ফ্লোর প্রাইস আরোপে বাজারের স্বাভাবিক গতি থেমে যায় এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ভেঙ্গে পড়ে।

ডিবিএ সভাপতি বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতই, প্রাইমারি রেগুলেটর হিসেবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের হাতে আইপিও লিস্টিং ও ডি-লিস্টিং করবার ক্ষমতা থাকা উচিত ছিল। কিন্তু বাংলাদেশে আমরা দেখি, আইপিও লিস্টিং-এর ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থাই সর্বেসর্বা এবং সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। স্টক এক্সচেঞ্জের এখানে ভূমিকা নাই বললেই চলে। এইভাবে বাজারে আনা মানহীন আইপিওর দায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপরই বর্তায়।

তিনি বলেন, তৎকালীন ডিএসই বোর্ড প্রতিটি ট্রেকের অকশন মূল্য / নূন্যতম বিক্রয়মূল্য ১৫ কোটি টাকা নির্ধারন করলেও বিগত কমিশনের চাপের মূখে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বোর্ড মাত্র ১ কোটি টাকায় এই ট্রেকগুলো বিক্রি করে দেয়। আমরা মনে করি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ আনুমানিক ৩০০-৫০০ কোটি টাকা হারিয়েছে।

ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করা হয়েছে, যার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটি তৎকালীন সরকারের নির্দেশে গঠিত হয়েছিল এবং বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশের টাকা তছরুফ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আমরা এই প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করার দাবী জানাই এবং যাদের অর্থ নেওয়া হয়েছে, তাদেরকে অবিলম্বে তা ফেরত দেওয়ার দাবী জানাচ্ছি।

বিগত সময়ে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বিদেশে রোডশো আয়োজন করেছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ছিল। এই রোডশোগুলো থেকে বিনিয়োগ আনার পরিবর্তে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার ক্ষতি হয়েছে। আমরা প্রতিটি রোডশোর শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবী জানাচ্ছি এবং কত টাকা খরচ হয়েছে এবং এর বিনিময়ে কত টাকা অর্জন হয়েছে তা জনসম্মুখে প্রকাশ করার দাবী জানাচ্ছি।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে