ঢাকা, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১ ভাদ্র ১৪৩২

নিয়মিত অতিরঞ্জিত মুনাফা-সম্পদ বেশি দেখিয়ে আসছে সোনালি আঁশ

২০২৫ আগস্ট ২৪ ০৮:৪৭:২৬
নিয়মিত অতিরঞ্জিত মুনাফা-সম্পদ বেশি দেখিয়ে আসছে সোনালি আঁশ

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সোনালি আঁশ কর্তৃপক্ষ গত ১৮ বছর বা দেড় যুগ ধরে বিনিয়োগকারীসহ শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। তারা প্রতিবছরই অতিরঞ্জিত মুনাফা ও সম্পদ দেখিয়ে আসছে। যা কোম্পানিটির আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় উঠে এসেছে।

এ কোম্পানিটিতে আর্থিক হিসাবে অনিয়মের শেষ নেই। যা নিয়ে নিরীক্ষক ৭ পৃষ্টার প্রতিবেদন তুলে ধরেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের অনিয়ম নিয়ে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উঠে আসা বিভিন্ন অনিয়মের মধ্যে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ প্রথম পর্ব তুলে ধরা হল।

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, এ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ৫০ কোটি ৪৩ লাখ টাকার জমি, ভবন ও প্লান্ট অ্যান্ড মেশিনারীজ পূণ:মূল্যায়ন করেছে। কিন্তু তারা এ থেকে বৃদ্ধি পাওয়া সম্পদের (রিভ্যালুয়েশন সারপ্লাস) উপর আইএএস-১৬ অনুযায়ি, অবচয় চার্জ করে না। এর মাধ্যমে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ওই অর্থবছর থেকে প্রতিবছর অতিরঞ্জিত মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখিয়ে আসছে।

আর্থিক হিসাবের নোট-২.১৯ অনুযায়ি, পণ্য গ্রাহকের কাছে পৌছানোর পর কোম্পানির আয় হিসেবে গণ্য করার পলিসি নেওয়া আছে। তারপরেও এ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ প্রতি মাসে শেষে পণ্য পৌছানোর আগেই ভাউচারের বিপরীতে আয় দেখিয়ে আসছে। যা কোম্পানির গৃহিত পলিসি ও আইএফআরএস ১৫ এর সঙ্গে অসামঞ্জস্য। এর মাধ্যমে কোম্পানির অতিরঞ্জিত আয় দেখানোর ইঙ্গিত দেয় বলে জানিয়েছে নিরীক্ষক।

নোট-২.২১ অনুযায়ি, এ কোম্পানিতে প্রভিডেন্ট ফান্ড গঠন করা হয়, পরিচালনায় ট্রাস্টি আছে এবং সমান ৮.৩৩% হারে কোম্পানি ও কর্মীরা এ ফান্ড গঠন করে। তবে নিরীক্ষক কোম্পানিটিতে এ জাতীয় ট্রাস্টি বোর্ড, দলিল, নিয়মের অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি। এমনকি কোম্পানিটির স্থায়ী ১৪৯৬ জন কর্মীর জন্য বেসিক বেতনের ৮.৩৩% এ ফান্ড গঠন করা হয়নি। কোম্পানিটির নেওয়া দীর্ঘমেয়াদি ঋণের কারেন্ট পোরশনকে ভাগ করে দেখানো হয়নি বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক। এর মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি দায় বেশি এবং চলতি দায় কম দেখানো হয়েছে। যা আইএএস-১ এর ৬৯ প্যারার লঙ্ঘন।

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, সোনালি আঁশ কর্তৃপক্ষ রিভ্যালুয়েশন সারপ্লাসকে বিবেচনায় না নিয়ে ডেফার্ড ট্যাক্স দেখিয়েছে ৭৭ লাখ টাকা। কিন্তু আইএএস-১২ অনুযায়ি কোম্পানিটির ডেফার্ড ট্যাক্স আসে ৩ কোটি ২২ লাখ টাকা। ফলে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকার ডেফার্ড ট্যাক্স কম দেখিয়েছে।

কোম্পানিটিতে ৬০ লাখ টাকার শ্রমিক ফান্ড রয়েছে। তবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আইন অনুযায়ি তা বিতরন করেনি। এমনকি কোম্পানিটিতে এ বিষয়ে পৃথক কোন বোর্ড, দলিল বা নিয়ম নেই।

কোম্পানিটিতে ২৮ কোটি ২৭ লাখ টাকার মজুদ পণ্য ছিল বলে আর্থিক হিসাবে দেখায়। তবে ওই মজুদ পণ্যের সত্যতা যাচাই করতে পারেনি নিরীক্ষক। কারন কোম্পানিটিতে মজুদ পণ্যের রেজিস্টার ও আইটেম ভিত্তিক রিপোর্ট নেই।

এই কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আয়কর আইন, ২০২৩ এর ৫৫ ধারা অমান্য করে নগদে কাঁচামাল কিনে এবং অন্যান্য ব্যয় পরিশোধ করে।

এসব বিষয়ে সোনালি আঁশের কোম্পানি সচিব মো. হাবিবুর রহমান খান অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, অফিসে আলাপ করে জানাবেন। তবে গত ২১ আগস্ট মেইল করেও কোন প্রতিউত্তর পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, ১৯৮৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া সোনালি আঁশের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এরমধ্যে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন শ্রেণীর (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতিত) বিনিয়োগকারীদের মালিকানা ৬৮.৯৮ শতাংশ। কোম্পানিটির শনিবার (২৩ আগস্ট) শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ২৩১.৯০ টাকায়।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে