ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

সমতা লেদারের কৃত্রিম আর্থিক হিসাব

২০২৫ নভেম্বর ১৮ ০৮:০১:৩৭
সমতা লেদারের কৃত্রিম আর্থিক হিসাব

ইব্রাহিম হোসাইন (রেজোয়ান) : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সমতা লেদার ব্যবসায় খুবই দূর্বল কোম্পানি। কোনভাবে টিকে আছে। তবে কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ে হয় কারসাজি। স্বল্পমূলধনী কোম্পানি হওয়ায় যা সহজে করা যায়। যা আরও সহজ করে তোলে কোম্পানি কর্তৃপক্ষের যোগসাজোগে বানানো কৃত্রিম আর্থিক হিসাব।যা বিগত সময়ে নিরীক্ষা প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে।

সমতা লেদারের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধের হিসাবের কারসাজির আশ্রয় নিয়েছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। তাদেরই প্রকাশিত ওই অর্থবছরের ১ম প্রান্তিক ও ২য় প্রান্তিকের সঙ্গে ৬ মাসের একত্রের হিসাবে ভিন্নতা দেখা দিয়েছে। যেখানে তারা কৃত্রিমভাবে লোকসান কম ও বিক্রি বেশি দেখিয়েছে।

দেখা গেছে, কোম্পানিটির ১ম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২৫) শেয়ারপ্রতি (০.০৯) টাকা লোকসান এবং ২য় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর ২৫) ০.০৩ টাকা মুনাফা দেখানো হয়েছে। এ হিসাবে ৬ মাসে একত্রে (জুলাই-ডিসেম্বর ২৫) শেয়ারপ্রতি লোকসান হয় (০.০৬) টাকা। কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ৬ মাসে লোকসান দেখিয়েছে (০.০২) টাকা। এক্ষেত্রে শেয়ারপ্রতি (০.০৪) টাকা লোকসান কম দেখানো হয়েছে।

এই কোম্পানিটির ১ম প্রান্তিকে ৪৭ লাখ ২৯ হাজার টাকার এবং ২য় প্রান্তিকে ৪ কোটি ৩১ লাখ ৯৯ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি দেখানো হয়েছে। এ হিসাবে ৬ মাসে একত্রে পণ্য বিক্রির পরিমাণ হয় ৪ কোটি ৭৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা। তবে তারা ৬ মাসে দেখিয়েছে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে কোয়ার্টারলি হিসাবের বিবেচনায় ২ লাখ ২২ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি বেশি দেখানো হয়েছে।

এদিকে কোম্পানিটির কোয়ার্টারলি হিসাবের তুলনায় ৬ মাসের একত্র হিসাবে ২ লাখ ২২ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি বেশি দেখানো হলেও কস্ট অব গুডস সোল্ড বা বিক্রি পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বাড়েনি। কোম্পানিটির ১ম প্রান্তিকে ৪৪ লাখ ৫ হাজার টাকা ও ২য় প্রান্তিকে ৪ কোটি ৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকার যোগফল ৪ কোটি ৫০ লাখ ৬০ হাজার টাকাকেই ৬ মাসের একত্র হিসাবে কস্ট অব সেলস দেখানো হয়েছে। কিন্তু বিক্রি বাড়লে কস্ট অব গুডস সোল্ডস বৃদ্ধি স্বাভাবিক।

সমতা লেদার কর্তৃপক্ষের দেখানো ১ম প্রান্তিকের হিসাবে কোন নন অপারেটিং ইনকাম নেই, তবে ২য় প্রান্তিকে আছে ৪ লাখ ২৬ হাজার টাকা। এ হিসাবে ৬ মাসে একত্রে ৪ লাখ ২৬ হাজার টাকাই নন অপারেটিং ইনকাম হয়। কিন্তু তারা ৬ মাসে দেখিয়েছেন ৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত ২ লাখ ২২ হাজার টাকার বেশি নন অপারেটিং ইনকাম দেখানো হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ রমজান আলীর সঙ্গে ২৫ অক্টোবর থেকে কয়েক দফায় যোগাযোগ করা হয়। এরমধ্যে একবার তিনি জানান, ১ম প্রান্তিকের হিসাবে নন অপারেটিং ইনকামকে বিক্রির মধ্যে দেখানো হয়েছে। তবে ৬ মাসের হিসাবে নন অপারেটিং ইনকামকে সেলস থেকে বাদ দিয়ে দেখানো হয়েছে। এ কারনে ৬ মাসের হিসাবে ২ লাখ ২২ হাজার টাকার নন অপারেটিং ইনকাম বেড়েছে।

তাহলেতো ১ম ও ২য় প্রান্তিকের পণ্য বিক্রি ৬ মাসের একত্র হিসাবে ২ লাখ ২২ হাজার টাকার কমে আসবে, কিন্তু সেটা বৃদ্ধির কারণ কি, এমন প্রশ্নে তিনি লিখিত বক্তব্য জানাবেন বলে জানান। কিন্তু জানাননি।

অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য লড়াই করা এমন একটি কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিক হারে বাড়ে। এর মাধ্যমে শেয়ারটি অনেক মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানির থেকে বেশিতে উঠে গেছে। যার পেছনে কোন যৌক্তিকতা খুজে পায়নি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। এজন্য কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ করে প্রতারিত হওয়া থেকে রক্ষা করতে বিনিয়োগকারীদের কয়েক দফায় সচেতন করার জন্য তথ্য প্রকাশ করেছে।

উল্লেখ্য, সমতা লেদারের গত ১৯ মে শেয়ার দর ছিল ৪৯.১০ টাকায়। যা ১৭ নভেম্বর লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ৮৩.৪০ টাকায়। অর্থাৎ ৬ মাসে শেয়ারটির দর বেড়েছে ৩৪.৩০ টাকা বা ৭০ শতাংশ। তবে শেয়ারটি গত ২৫ আগস্ট ১১৫.৭০ টাকায় উঠে গিয়েছিল।

এমন উত্থানের পেছনে কোন যৌক্তিকতা খুজে পায়নি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে