ঢাকা, রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২

অর্থ সংকটে অপসোনিন গ্রুপের গ্লোবাল হেভী কেমিক্যালস

২০২৫ ডিসেম্বর ২১ ০৯:৩৮:৫৭
অর্থ সংকটে অপসোনিন গ্রুপের গ্লোবাল হেভী কেমিক্যালস

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক :শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত দেশের প্রতিষ্ঠিত ও আওয়ামী ঘরনার অপসোনিন গ্রুপের গ্লোবাল হেভী কেমিক্যালস চরম অর্থ সংকটে পড়েছে। যাতে ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। এছাড়া দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। এছাড়া নিকট ভবিষ্যতে কোম্পানিটির বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়তে যাচ্ছে। এতে করে অপসোনিন গ্রুপটির সম্মান প্রশ্নের মূখে পড়েছে।

কোম্পানিটির ২০২৪-২৫ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় এ তথ্য জানিয়েছেন নিরীক্ষক।

অপসোনিন গ্রুপের গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস লিমিটেড হলো তাদের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। যা বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি ক্লোর-অ্যালকালি কারখানা হিসেবে পরিচিত এবং কস্টিক সোডা, ক্লোরিন, হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম হাইপোক্লোরাইট ও হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপাদনে বিশেষজ্ঞ।

এমন একটি প্রতিষ্ঠিত গ্রুপের কোম্পানি হয়ে গ্লোবাল হেভীর বন্ধের উপক্রম হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের কাছে অপসোনিন গ্রুপ নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। যারা চাইলেই গ্লোবাল হেভী কেমিক্যালকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনতে পারে বলে মনে করেন বিনিয়োগকারীরা। যদি তা না করেন এবং গ্লোবাল হেভী ধংস হয়ে যায়, এতে করে কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডাররা যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হবেন, একইভাবে সম্মানহানি হবে পুরো অপসোনিন গ্রুপের। এছাড়া স্বৈরাচার আওয়ামীলীগের স্বার্থে দেশের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে গ্লোবাল হেভী কেমিক্যালসকে ইচ্ছাকৃতভাবে ধংসের দিকে ঠেলে দিতে চাওয়ার সন্দেহ সঠিক প্রমাণিত হবে বলে মনে করেন বিনিয়োগকারীরা।

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, কোম্পানিটির চলতি দায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩৮.২৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে ব্যাংক ঋণ ৯১.৫৫ কোটি টাকা ও পাওনাদারের পাওনা ১৮.৮৪ কোটি টাকা। তবে কোম্পানিটির চলতি সম্পদের পরিমাণ আছে মাত্র ১৬.৯৮ কোটি টাকা। তার মানে কোম্পানিটি আর্থিক অস্বচ্ছলতায় পড়েছে এবং দায় পরিশোধ সক্ষমতা নেই। যা কোম্পানিটির কার্যক্রম পরিচালনায় নিকট ভবিষ্যতে সমস্যার তৈরী করবে।

এই কোম্পানিটির আগের অর্থবছরের ৭৪.৪২ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নেমে এসেছে ৩১.৩২ কোটি টাকায়। এক্ষেত্রে ৫৮% বিক্রি কমেছে। সবমিলিয়ে কোম্পানিটির নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন বজায় রাখার সক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নিরীক্ষক।

গ্লোবাল হেভীর পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সম্পদের ঘাটতির কারণে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা অপ্রত্যাশিতভাবে গত বছরের ১৫ অক্টোবর কারখানার কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করতে বাধ্য হয়। পরবর্তীতে ৩১ অক্টোবর গ্যাস সরবরাহের সাথে সম্পর্কিত নয় এমন কয়েকটি ইউনিটের জন্য সীমিত পরিসরে কারখানার কার্যক্রম পুনরায় শুরু করে।

আরও পড়ুন.....

খুলনা পাওয়ারের অস্তিত্ব হুমকিতে

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, কোম্পানিটির জমি ২০১১ ও ২০২৪ সালে পূণ:মূল্যায়নের মাধ্যমে ২৫৬.২৪ কোটি টাকা বেড়েছে। এতে করে শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ (এনএভিপিএস) বেড়েছে ৩৩.৮১ টাকা। কিন্তু একইসময়ে কোম্পানিটির অন্যান্য স্থায়ী সম্পদের মধ্যে ভবন, মেশিনারীজ, জেনারেটর ইত্যাদি সম্পদের ইমপেয়ারম্যান্ট টেস্ট করে প্রকৃত বাজার দর নির্ণয় করেনি। যেখানে ওইসব সম্পদের দর আর্থিক হিসাবে দেখানোর থেকে কম আছে।

এই পরিস্থিতি কোম্পানিটির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা নিয়ে খুবই শঙ্কা তৈরী করেছে বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক।

এই কোম্পানিটিতে ৩৩ লাখ টাকার অবন্টিত লভ্যাংশ রয়েছে। কিন্তু এ অর্থ বিএসইসির ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে স্থানান্তর করেনি।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত গ্লোবাল হেভীর পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৭২ কোটি টাকা। এরমধ্যে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন শ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের (উদ্যোক্তা/পরিচালক ছাড়া) মালিকানা ৩১.৪০ শতাংশ। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) কোম্পানিটির শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ২০.২০ টাকায়।

বি:দ্র:গ্লোবাল হেভী কেমিক্যালস নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম পর্ব তুলে ধরা আজ। পরবর্তীতে কোম্পানিটির বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরা হবে।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে