ঢাকা, শনিবার, ৩ মে ২০২৫, ২০ বৈশাখ ১৪৩২

অন্যের কথায় উৎসাহিত হয়ে বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়-বিএসইসি কমিশনার

২০২৩ অক্টোবর ১২ ১৭:০৬:৪৬
অন্যের কথায় উৎসাহিত হয়ে বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়-বিএসইসি কমিশনার

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার আব্দুল হালিম বলেন, বুঝেশুনে পুঁজিবাজারে আসতে হবে। কারো কথায় প্ররেচিত হয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা ঠিক হবে না। যারা অন্যের কথায় উৎসাহিত হয়ে বাজারে বিনিয়োগ করে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সবাইকে সাথে নিয়ে দেশের পুঁজিবাজার উন্নয়নে কাজ করলেই স্থিতিশীল পুঁজিবাজার গড়ে তোলা সম্ভব বলে তিনি জানিয়েছেন৷

বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ ২০২৩ এর ধারাবাহিক কর্মসূচীর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড এবং ডিএসই ব্রোকারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর যৌথ উদ্যোগে ডিএসই মাল্টিপারপাস হলে “Sustainable Practice and Untapped Investment Opportunities” শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়৷ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসি কমিশনার মোঃ আব্দুল হালিম৷

আব্দুল হালিম বলেন, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে পারলে বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজার মুখি হবে।

তিনি বলেন, আমরা সমাজে বৈষম্য চাইনা, আমরা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য সমাজ ব্যবস্থা চাই। দেশে আয়ের বৈর্ষম্য রয়েছে, তবে টেকসই অর্থ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য এ বৈষম্য দূর করতে হবে।

বিএসইসি’র এ কমিশনার বলেন, দেশের কয়েকটি জেলায় বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বেশি রয়েছে। অন্য জেলাগুলোতে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারি অনেক কম। এসব জেলায় বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজারে বৃদ্ধি করার জন্য চেষ্টা করতে হবে। উত্তরাঞ্চলসহ বেশ কয়েকটি জেলায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী একেবারেই কম। একই সাথে এসব জেলায় নারী বিনিয়োগকারী আরো কম। তাদেরকে পুঁজিবাজার মুখি করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের যে ভিশন স্মাট বাংলাদেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়া৷ এক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। এক্ষেএে দেশের পুঁজিবাজার অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে। আর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের বুঝেশুনে বিনিয়োগ করতে হবে। বিনিয়োগ দীর্ঘমেয়াদী হলে তা টেকসই হয়। আর সকল ধরনের বিনিয়েূাগকারী যাতে আইন অনুযায়ী ব্যবসা করতে পারে সে বিষয়ে আপনাদের খেয়াল রাখতে হবে।

ডিবিএ’র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোঃ সাজিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতেই ডিবিএ’র প্রেসিডেন্ট রিচাড ডি রোজারিও বলেন, বিশ্বায়নের ফলে আজ ব্যবসা বাণিজ্যের প্রকৃতি ও ধরণ পাল্টেছে। প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ বিনিয়োগের সুবিধা পেতে বাজারে আসছে। বিনিয়োগকারীর অংশগহণ বৃদ্ধির ফলে বাজারে পণ্য বৈচিত্র এসেছে। এরফলে যেমন বাজার বড় হচ্ছে তেমনি ঝুঁকির আশংকা তৈরি হচ্ছে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীসহ বাজার সংশ্ষ্টি সকলের মাঝে বাড়তি সাবধানতা ও সতর্কতা থাকা একান্ত দরকার। তাই আহবান থাকবে এই অনুষ্ঠান থেকে প্রকৃত শিক্ষা নিয়ে সেই মোতাবেক বিনিয়োগ পরিকল্পনা করা এবং আপনাদের বিনিয়োগ সুরক্ষিত রাখা।

তিনি আরো বলেন, এ ধরনের অনুষ্ঠনের আয়োজনের আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো কিভাবে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করে পুজিবাজারে লাভবান হওয়া যায়। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বর্তমান ও সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীগন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে।

পরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এটিএম তারিকুজ্জামান “Sustainable Practice and Untapped Investment Opportunities” শীর্ষক সেমিনার বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন৷

মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি, বিজনেস সাসটেনেবিলিটি, সাসটেনেবিলিটি ডেভেলপমেন্ট গোলসমূহ, এনভারমেন্ট, সোশ্যাল, গর্ভান্যান্স (ইএসজি) এর বিষয়সমূহ, সাসটেনেবিলিটি প্রাকটিসের নীতি উদ্দেশ্য ও মূল উপাদান, টেকসই বিনিয়োগ ও অনুশীলনের সুবিধা, গ্লোবাল রিপোর্টিং ইনিশিয়েটিভস (জিআরআই), ডিএসই-জিআরআই এর সহযোগিতা, টেকসই রিপোর্টিং এর ক্ষেত্রে ডিএসই এবং জিআরআই এর উদ্যোগ এবং বাংলাদেশে সাসটেনেবল রিপোর্টিং এর প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এ বিষয়ে তিনি সকল তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে অধিকতর সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ নেয়ার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।

ডিএসইর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু বলেন, টেকসই উন্নয়ন করতে গেলে স্থিতিশীল বিনিয়োগ দরকার, যেটি বর্তমান সরকার করে যাচ্ছে। যে কোনো দেশের বিনিয়োগকারীরা এখানে বিনিয়োগ করার আগে সুশাসনসহ বিভিন্ন বিষয় লক্ষ্য করেন এজন্য বিদেশে বিনিয়োগ আনতে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, দেশে এখন অনেক গ্রীন কারখানা তৈরি হয়েছে। এসব গ্রীন কারখানায় বিপুল সংখ্যক বিদেশি ক্রেতা আসছেন। এবং অন্য যেকোনো কারখানার তুলনায় এখানে বেশি কাজের অর্ডার দিচ্ছেন।

পুঁজিবাজারকে টেকসই করার গুরুত্ব অনেক উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের দেশের শেয়ারবাজারকে টেকসই করতে হবে। এখানে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করতে হবে। এজন্য টেকসই অর্থব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

তিনি আরও বলেন, শুধু আইন দিয়ে নয় উত্সাহ ও উদ্দীপনার সাথে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। পুঁজিবাজার স্থিতিশীল অর্থনীতি উন্নয়নে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। এ অবদান আরো বাড়ানোর জন্য আমাদেরকে কাজ করতে হবে।

“Sustainable Practice and Untapped Investment Opportunities” শীর্ষক সেমিনারে প্যানেল আলোচক হিসেবে ছিলেন ডিএসই'র পরিচালক মোঃ শাকিল রিজভী, ডিবিএ'র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোঃ সাইফুদ্দিন, সিএফএ, জিআরআই দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক ড. অদিতি হালদার এবং সিএমজেএফ'র প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে