ঢাকা, সোমবার, ২ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা মানছেন না মাকসুদ কমিশন

২০২৫ মে ২৯ ০৯:২৩:৪০
প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা মানছেন না মাকসুদ কমিশন

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারের মন্দার মধ্যে গত ১১ মে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘পুঁজিবাজার উন্নয়ন ও শক্তিশালীকরণ’ এর লক্ষ্যে অর্থ উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেন।সেখানে প্রধান উপদেষ্টা সংস্কারের জন্য বিদেশী বিশেষজ্ঞ আনাসহ ৫টি নির্দেশনা দিয়েছেন। যা মানছেন না খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন।

ওই বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান উপদেষ্টা পাঁচটি প্রধান নির্দেশনা দিয়েছেন। এরমধ্যে তৃতীয় বিষয় হলো- স্টক মার্কেটে ভেস্টেড ইন্টারেস্টেড লোক অনেক। অনেক ধরনের ভেস্টেড ইন্টারেস্টেড লোক আছে। ফলে দেখা যায় আমরা রিফর্ম নিলেও, অনেক সময় রিফর্মগুলো ঠিকমত কাজ করতে চায় না বা এরা রিফর্মগুলোর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায়। এ জন্য স্টক মার্কেটে ডিপ রিফর্ম যাতে ক্যারি আউট করা যায়, এমন ব্যক্তি যাদের এখানে ইন্টারেস্ট নেই, এমন একটি রিফর্মের কথা প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন। এক্ষেত্রে বিদেশী এক্সপার্টদের এনে ৩ মাসের মধ্যে রিফর্ম করার জন্য বলেছেন।

এরপরে গত ২৫ মে পুঁজিবাজার নিয়ে কাজ করা সাংবাদিকদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত সিএমজেএফ টক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের বিষয়ে উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, ঐতিহাসিকভাবে বিএসইসিতে বা বাংলাদেশের ক্যাপিটাল মার্কেটের যে রিফর্মগুলো যারা করেছেন, তারা সবাই গোষ্ঠী স্বার্থের দিকে তাকিয়েছিলেন। এই গোষ্ঠীটা একটা পারপাস সার্ভ করছে, ওই গোষ্ঠীর প্রতিপক্ষ এসে আরেকটা পারপাস সার্ভ করেছে। পুঁজিবাজার সংস্কারের জন্য আপনি যাকে নিয়ে আসতেছেন, তারা ডাকাত। তো এই জায়গাতে রিফর্মের জায়গা প্রফেসর ইউনূস বলছেন, এখানে খুব স্ট্রং এবং খুব গভীর রিফর্ম করতে হবে। এই রিফর্মটা যে করবে, তারা হচ্ছে এই গোষ্ঠী স্বার্থের অনেক দূরের লোক। তারাই এসে করবে। তারা নির্মহভাবে রিফর্ম করবে। পুরো বিশ্বেই শেয়ার মার্কেটের খুব গভীর রিফর্ম হয়। ভালো জায়গায় যায়। কিন্তু তো বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে যে, যারা রিফর্ম করতে চান, তারা আসলে আরেকটা ধান্দাবাজ গ্রুপ।

তিনি বলেন, এজন্য প্রফেসর ইউনূস গত মিটিংয়ে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন যে, সেট অফ ফরেন এক্সপার্ট, যারা শেয়ার মার্কেট কীভাবে গ্লোবালি রিফর্ম করা যায়, গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ডে আনা যায়, সেটাই যেন খুব দ্রুত হয়, তাদেরকে নিয়ে আসা হয়। এটার জন্য একটা তিন মাসের টাইমলাইন দেওয়া হয়েছে। তিন মাসের মধ্যে তারা এসে শেয়ার মার্কেটের কী কী করণীয়, সেটা তারা বলবেন এবং সে অনুযায়ী খুব দ্রুত অ্যাকশন নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন....

কারসাজিতে ক্ষতিগ্রস্থ হয় বিনিয়োগকারীরা : লাভবান হয় বিএসইসি

মাকসুদ কমিশনের ৯ মাসে বিনিয়োগকারীরা হারিয়েছে ১.১৭ লাখ কোটি টাকা

এছাড়া ২৭ মে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকে আইপিও নিয়ে কাজ করা ইস্যু ব্যবস্থাপকদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) পক্ষ থেকে আইপিও রুলস যুক্তিসঙ্গত পরিবর্তনের মাধ্যমে আর্ন্তজাতিক মানে উন্নীতকরণের দাবি করা হয়েছে।

এরপরেও ২৭ মে রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা অমান্য করে বিদেশী এক্সপার্ট বা বিশেষজ্ঞদের ছাড়া নিজেরাই মিউচ্যুয়াল ফান্ড বিধিমালা এবং পাবলিক ইস্যু রুলস এর বিষয়ে আইনী প্রক্রিয়া শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেখানে প্রেস সচিবের ভাষ্যমতে, সেই ডাকাতদের বা ধান্দাবাজ গ্রুপ দিয়েই সংস্কারের কাজ শুরু করেছে বিএসইসি।

এ বিষয়ে শীর্ষ এক মার্চেন্ট ব্যাংকার অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, বিগত বছরগুলোতে বিএসইসি যত আইন-কানুন করেছে, সেগুলো কোথাও টিকবে না। এসব আইন-কানুন করা হয়েছে বাস্তবতার বাহিরে গিয়ে নিজেদের খুশি মতো। যে কারনে ওইসব আইন-কানুন বিশ্বের শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর বৈশ্বিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল অরগানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশনসের (আইওএসকো) মাধ্যমে মানদণ্ড যাচাই করতে গেলেই বুঝা যেত বিএসইসির অজ্ঞতা। এ কারনেই হয়তো প্রধান উপদেষ্টা বিদেশী বিশেষজ্ঞদের এনে সংস্কার করার কথা বলেছেন। কিন্তু বর্তমান কমিশন এই নির্দেশনা অমান্য করে বিদেশী বিশেষজ্ঞদের ছাড়াই পাবলিক ইস্যু রুলস ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড এর আইনী প্রক্রিয়া শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

গত ২৭ মে এই আইনী প্রক্রিয়া শুরু করা নিয়ে বিএসইসি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও বাজারের সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কর্তৃক গঠিত ‘পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স’ কর্তৃক সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (মিউচ্যুয়াল ফান্ড) বিধিমালা এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক ইস্যু) রুলস এর বিষয়ে পেশকৃত চূড়ান্ত সুপারিশমালার আইনী প্রক্রিয়া শুরু করার বিষয়টি অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে পুঁজিবাজারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরী দুটি সংস্কারের আইনী প্রক্রিয়া শুরু হলো। ফলশ্রুতিতে মিউচ্যুয়াল ফান্ড এবং আইপিও অনুমোদন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি পাবে এবং সর্বোপরি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি পাবে। এই সংস্কারের ফলে আগামীতে ভালো ও মৌল ভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিসমূহ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত হবে এবং দেশের মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হবে।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে