ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২

বিশেষ নিরীক্ষার বেরিয়ে আসবে সব অপকর্ম

আইপিওতে টাকা উত্তোলনের আগে ব্যবসায় নিয়মিত উত্থান হলেও এখন পতনে

২০২৫ জুলাই ১৫ ০৮:৪৫:২৬
আইপিওতে টাকা উত্তোলনের আগে ব্যবসায় নিয়মিত উত্থান হলেও এখন পতনে

শেয়ারবাজার থেকে টাকা নিয়ে ব্যবসায় সম্প্রসারণ করবে, বাড়বে আয় ও মুনাফা- এমন স্বপ্ন দেখিয়ে সাধারন বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৩০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে একমি পেস্টিসাইডস। প্রতারক নিরীক্ষকের হাত ধরে অতিরঞ্জিত আর্থিক হিসাব দেখিয়ে শেয়ারবাজারে আসা এ কোম্পানিটির আইপিওতে আসার আগে নিয়মিত আয় (পণ্য বিক্রি) ও মুনাফা বাড়ে। কিন্তু সেই কোম্পানির শেয়ারবাজারে আসার পরে কমতে কমতে এখন লোকসানে। মাত্র ২ বছরের ব্যবধানে এই অধ:পতন। তাই কোম্পানিটির বিগত ৫ বছরের আর্থিক হিসাবের প্রকৃত সত্য তথ্য বের করে আনতে বিশেষ নিরীক্ষা করা দরকার। বিএসইসির এই পদক্ষেপে অপরাধী যেমন চিহ্নিত হবে, একইসঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াবে। বড় অনিয়মের মধ্য দিয়ে শেয়ারবাজারে আসতে উদগ্রীব এ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এখনো আইপিওর বড় অংশ ব্যবহার করতে পারেনি।

প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে কোম্পানিটিকে শেয়ারবাজারে আনা হয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে প্লেসমেন্ট গ্যাংয়ের সদস্য ফরিদ এর নেতৃত্বের একটি সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী। যার সঙ্গে কাজ করে কাজী সাইফুর রহমানসহ অন্যান্যরা। তারা একমি পেস্টিসাইডসে অনেক টাকার প্লেসমেন্ট বাণিজ্য করে।

এদিকে প্রতারক নিরীক্ষক সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং এর পার্টনার রমেন্দ্র নাথ বসাকের মাধ্যমে নিরীক্ষা করিয়ে শেয়ারবাজারে আনা হয় একমি পেস্টিসাইডসকে। যে প্রতারক নিরীক্ষক সিলভার কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলসের একই সময়ের দুই রকম অ্যাকাউন্টস নিরীক্ষা করেছে এবং সঠিক বলে সার্টিফিকেট দিয়েছে। যা দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। এই জঘন্যতম কাজের জন্য তার নিরীক্ষা কাজের উপর ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি)। আর সেই প্রতারক নিরীক্ষা করেছে একমি পেস্টিসাইডস।

এই প্রতারক নিরীক্ষক দিয়ে অতিরঞ্জিত আয় ও মুনাফা দেখিয়ে শেয়ারবাজারে আসে একমি পেস্টিসাইডস। যাতে এখন কোম্পানিটির অবস্থা বেহাল।

প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি শেষে কোম্পানিটির সবচেয়ে বেশি বড় পতন হয়েছে। ২০২১ সালের ১৪ নভেম্বর লেনদেন শুরু হওয়া এ কোম্পানিটির প্লেসমেন্ট শেয়ারে লক-ইন উঠে গেছে ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর। যে কোম্পানিটির আইপিও পূর্ব ১০ কোটি ৫০ লাখ শেয়ারের মধ্যে ৪ কোটি ২৯ লাখ বা ৪০.৮৯ শতাংশ ছিল উদ্যোক্তা/পরিচালকদের। বাকি ৬ কোটি ২১ লাখ বা ৫৯.১১ শতাংশ ছিল প্লেসমেন্ট শেয়ার।

শেয়ারবাজারে আসার আগে প্রসপেক্টাসে কোম্পানিটির যে ৫ বছরের আর্থিক হিসাব প্রকাশ করা হয়, সেখানে নিয়মিত আয় ও মুনাফা বাড়ে বলে দেখানো হয়েছিল। দেখা গেছে, কোম্পানিটির ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ৯৪ কোটি ২৯ লাখ টাকার আয় টানা বেড়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরে হয় ১৫৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে নিট মুনাফাও টানা বেড়ে ৮ কোটি ৩১ লাখ থেকে ১৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা হয়। কিন্তু কোম্পানিটির যখনই শেয়ারবাজার থেকে টাকা নেওয়া হয়ে যায়, তারপরে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে প্রকৃত ঘটনা।

শেয়ারবাজারে আসার পরে কোম্পানিটির ২০২১-২২ অর্থবছরে আয় কিছুটা বেড়ে হয় ১৫৯ কোটি ১১ লাখ টাকা। কিন্তু মুনাফা আগের মতো হয়নি। শেয়ারবাজারে আসার আগে মুনাফা বাড়লেও তালিকাভুক্তির পরে কমে গেছে। ওই অর্থবছরে মুনাফা কমে হয় ১৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।

তবে এরপরের ২০২২-২৩ অর্থবছরে হয়ে গেল সবদিক দিয়েই বড় পতন। কোম্পানিটির ১৫৯ কোটি ১১ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি নেমে আসল ১২০ কোটি ৪৬ লাখ টাকায়। এক্ষেত্রে কমল ৩৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকার বা ২৪ শতাংশ। তবে নিট মুনাফা কমে গেল আরও বেশি হারে। এক্ষেত্রে মুনাফা কমে ৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকার বা ৩১ শতাংশ।

এরপরে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আরেক ধাপ এগিয়ে কোম্পানিটি লোকসানে নামে। ওই অর্থবছরে কোম্পানিটির ১০ কোটি ২৮ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই ২০২৪-মার্চ ২০২৫) কোম্পানিটির লোকসান হয়েছে ১৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।

প্লেসমেন্টহোল্ডারদের স্বার্থে শেয়ারবাজারে আসা এ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ সাড়ে ৩ বছরেও আইপিও ফান্ড ব্যবহার করতে পারেনি। প্রসপেক্টাসে ঘোষণা অনুযায়ি, কোম্পানিটির আইপিওতে উত্তোলন করা ৩০ কোটি টাকার সবটুকু ব্যবহারের সময়সীমা ছিল ২ বছর বা ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু সিএসইর তথ্য অনুযায়ি, সর্বশেষ প্রকাশিত গত ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আইপিওর অব্যবহৃত ফান্ড রয়েছে ৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা বা ২৭ শতাংশ।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে