ঢাকা, সোমবার, ২ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কারসাজিতে ক্ষতিগ্রস্থ হয় বিনিয়োগকারীরা : লাভবান হয় বিএসইসি

২০২৫ মে ২৮ ১০:১৬:৩৩
কারসাজিতে ক্ষতিগ্রস্থ হয় বিনিয়োগকারীরা : লাভবান হয় বিএসইসি

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে সাধারন বিনিয়োগকারীদের সঙ্গেপ্রতারণা বা কারসাজির দায়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক জরিমানা করে থাকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এক্ষেত্রে সাধারন বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হওয়ার কারনে বিএসইসি ওই জরিমানা করে থাকলেও তা বিনিয়োগকারীদের কোন উপকারে আসে না। তবে মাঝখানে বিএসইসির উপকার হয়। কারন জরিমানার পুরো অর্থ বিএসইসির কোষাগারেই রেখে দেওয়া হয়। এ নিয়ে খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের কোন ভাবনা কাজ করছে না। তবে সমন্বিত গ্রাহক হিসাব (সিসিএ) হতে অর্জিত সুদ আয় নিয়ে বড় দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় এই কমিশন। কিভাবে ওই টাকা কোথায় ও কিভাবে ব্যবহার করা যায়, তা নিয়ে অনেক ধারনা তাদের মাথায় চলে আসে।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, বিএসইসি সরকারি প্রতিষ্ঠান। এখান থেকে আয় করার জন্য সরকার বিএসইসি প্রতিষ্ঠা করেনি। কোন আয় না হলেও বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতনাদি পাবেন। তারপরেও বিএসইসি যেভাবে নিজের আয়ের প্রতি আগ্রহী, সেটা ঠিক না। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির উচিত জরিমানার অর্থ বিনিয়োগকারীদের সহযোগিতায় কাজে লাগানো।

কিন্তু সাধারন বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির মধ্য দিয়ে জরিমানাবাবদ আদায়কৃত অর্থ তাদের কোন কাজেই আসে না। বরং বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিতে উপকৃত হয় বিএসইসি। বিনিয়োগকারীরা যত বেশি প্রতারিত হবে, তত বেশি আয় বাড়বে বিএসইসির।

আরও পড়ুন....

বিএসইসির এফডিআর বাড়ছে: সংকুচিত হচ্ছে মধ্যস্থতাকারীরা

অথচ এই বিএসইসি বিনিয়োগকারীদের জন্য মায়া কান্না কাঁদে সবসময়। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্ব সংস্কৃতির বাহিরে গিয়ে সমন্বিত গ্রাহক হিসাব (সিসিএ) হতে অর্জিত সুদ আয়কে বিনিয়োগকারীদের উপকারে কিভাবে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে হুলস্থুল ফেলে দেয়। বিশ্বের অন্যসব দেশে যখন ওই সুদ ব্রোকাররাই ব্যবহার করে, সেখানে বিএসইসি ওই সুদকে বিনিয়োগকারী সুরক্ষা ফান্ডে ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়।

বিএসইসির এই উদ্যোগ নিয়ে ব্রোকার কমিউরিটির মধ্যে চরম হতাশা এবং ক্ষোভ তৈরী করে। এ নিয়ে ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন (ডিবিএ) বিএসইসির বিরুদ্ধে মামলা করার বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেয়। এছাড়া ব্রোকাররা বিএসইসি ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারি ড. আনিসুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাতে বিএসইসির জরিমানার অর্থ বিনিয়োগকারী সুরক্ষা ফান্ডে ব্যবহার করতে বলেন। কারন ওই জরিমানার পুরোটার হকদার বিনিয়োগকারীরা। তাদের ক্ষতির কারনেই বিএসইসি ওই জরিমানা করে থাকে। অথচ সেই অর্থ বিনিয়োগকারীরা পায় না। তাহলে জরিমানা করে বিনিয়োগকারীদেরতো কোন উপকারই হলো না। তাদের যে ক্ষতি হয়, সেই ক্ষতি থেকেই যায়।

এই পরিস্থিতির আলোকে মঙ্গলবার (২৭ মে) বিএসইসি সিসিএ হিসাবের সুদজনিত আয়ের ২৫% স্টক এক্সচেঞ্জের বিনিয়োগকারী ফান্ডে জমা দিয়ে বাকি অর্থ ব্রোকাররা ব্যবহার করতে পারবে মর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি।

তবে বিএসইসি শুরুতে ৭৫% বিনিয়োগকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি ও ২৫% সুরক্ষা ফান্ডে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এ নিয়ে ব্রোকাররা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল। যা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারি ড. আনিসুজ্জামানের কাছে তুলে ধরেছিল ব্রোকাররা। যার আলোকে আনিসুজ্জামান বিষয়টি বুঝতে পেরে ৭৫% ব্রোকারদের ব্যবহারের সুযোগ দিতে কমিশনকে নির্দেশ দেয়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) এক নেতা অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, বিএসইসি একটি সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা। প্রতিষ্ঠানটির কোন আয় না হলেও সব ব্যয় সরকার বহন করবে। এ অবস্থায় বিএসইসির ব্যয়ের চেয়ে আয় বেশি করার আসলে দরকার নেই। যেখানে বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানের অবস্থা নাজুক। এরমধ্যে ব্রোকারদের আরও নাজুক করার উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি।

অথচ সাধারন বিনিয়োগকারীদেরকে জবাইয়ের মধ্য দিয়ে বিএসইসি শত শত কোটি টাকা জরিমানাবাবদ আয় করে। ওই পুরো অর্থই আসে সাধারন বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির কারনে। সেই অর্থ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে কাজে লাগানোর ভাবনা বিএসইসির মধ্যে নেই। তাদের সবার আগে এই ভাবনাটা মাথায় আসা দরকার ছিল।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে