ঢাকা, সোমবার, ৫ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২

মাকসুদ কমিশনের সাড়ে ৮ মাসে বিনিয়োগকারীরা হারিয়েছে ১.০৯ লাখ কোটি টাকা

২০২৫ মে ০৫ ০৮:৫৪:০৮
মাকসুদ কমিশনের সাড়ে ৮ মাসে বিনিয়োগকারীরা হারিয়েছে ১.০৯ লাখ কোটি টাকা

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : সরকারের পতনের পরে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নেতৃত্বে পরিবর্তন এসেছে। তারপরেও আস্থা ফিরেনি বিনিয়োগকারীদের মাঝে। বরং আরও অনাস্থা তৈরী হয়েছে। এতে করে বাজার পতন হচ্ছে নিয়মিত। যাতে গত ১৮ আগস্ট কমিশনের পরিবর্তনের পরে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্যসূচক কমেছে ৯৮৬ পয়েন্ট। এসময় বিনিয়োগকারীরা হারিয়েছে প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকার পুঁজি।

এই পতনের জন্য বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের অযোগ্যতা ও শেয়ারবাজার নিয়ে জ্ঞান শুন্যতাকে দায়ী করে আসছেন বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে শেয়ারবাজারের সব শ্রেণীর মানুষ। এমনকি বিএসইসির সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং এই কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। অন্যদিকে তার অপসারনের দাবিতে নিয়মিত রাজপথে বিক্ষোভ করে আসছে বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারীদের এখন মূল দাবিই মাকসুদের পদত্যাগ। যার পদত্যাগেই শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলে বিশ্বাস বিনিয়োগকারীদের।

বিক্ষোভে বিনিয়োগকারীরা বলেন, মাকসুদ শেয়ারবাজার বুঝেন না। এটা শুধু সাধারন বিনিয়োগকারীদের কথা না। এই কথা এখন বিএসইসির সাবেক স্বনামধন্য চেয়ারম্যানসহ স্টেকহোল্ডারদের। তাই মাকসুদের অপসারন করা উচিত।

গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরে ১০ আগস্ট বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম পদত্যাগ করেন। এর ২দিন পরে ১২ আগস্ট পদত্যাগ করেন কমিশনার অধ্যাপক ড.শামসুদ্দিন আহমেদ ও ড. রুমানা ইসলাম। এরপরে গত ১৮ আগস্ট খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে চেয়ারম্যান এবং ২৮ আগস্ট মো. আলী আকবরকে ও ৩ সেপ্টেম্বর ফারজানা লালারুখ বিএসইসির কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে শেয়ারবাজারে ভালো হবে প্রত্যাশা করা হলেও তা হয়নি। উল্টা নতুন কমিশনের নিয়োগের দিন থেকে শনিবার (০৩ মে) পর্যন্ত ডিএসইর ডিএসইএক্স কমেছে ৯৮৬ পয়েন্ট।

অথচ আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পরে ও মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন পূণ:গঠনের আগে শেয়ারবাজারে অনেক ভালো হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিল। ওইসময় ৫ আগস্ট থেকে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত মূল্যসূচক বেড়েছিল ৬৭৫ পয়েন্ট। যা পরবর্তীতে বিএসইসিতে যোগ্য লোকের অভাবে সম্ভব হয়ে উঠেনি।

এ বিষয়ে ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, আমরা (ব্রোকার) শেষ হয়ে গেছি। টানা লোকসানে অস্তিত্ব না থাকার মতো অবস্থা। এরইমধ্যে অনেক ব্রোকার হাউজে কর্মী ছাটাই করতে হয়েছে। তবে সব কর্মী ছাটাই করেও টিকে থাকা যাবে না, যদি বিদ্যমান মন্দা চলতে থাকে।

খন্দকার মাকসুদকে বিএসইসিতে নিয়োগের দিন (১৮ আগস্ট) লেনদেনের শুরুতে ডিএসইএক্স সূচকটি ছিল ৫৯০৪ পয়েন্ট। যে সূচকটি শনিবার (০৩ মে) ৯৮৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৪৯১৮ পয়েন্টে। অর্থাৎ নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পরে সূচকটি কমেছে ৯৮৬ পয়েন্ট বা ১৭ শতাংশ।

এদিকে রাশেদ মাকসুদ বিএসইসিতে নিয়োগের দিন বাজার মূলধন বা সব সিকিউরিটিজের দাম ছিল ৭ লাখ ৮ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। যা ৩ মে নেমে এসেছে ৬ লাখ ৫৬ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকায়। এই সরল হিসাবে বিনিয়োগকারীদের সিকিউরিটিজের দাম কমেছে ৫২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বিনিয়োগকারীরা হারিয়েছে আরও অনেক বেশি।

মাকসুদ কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পরে ১৫টি ট্রেজারি বন্ড শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে লেনদেন শুরু করেছে। যেগুলোর দর বাজার মূলধনে যোগ হয়েছে। এখন ওইসব ট্রেজারি বন্ড যদি বাজার মূলধন থেকে বাদ দেওয়া হয়, তাহলে বিনিয়োগকারীরা হারিয়েছে অনেক বেশি।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ি, মাকসুদ কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৫টি ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন শুরু হয়েছে। যেগুলোর বাজার মূলধন বা সিকিউরিটিজের দাম আছে ৫৬ হাজার ৪২২ কোটি টাকা। এসব দর মাকসুদ কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পরে বাজার মূলধনে নতুন করে যোগ হয়েছে। এগুলো বাদ দিলে মাকসুদের নিয়োগের পরে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি কমেছে ১ লাখ ৮ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে