ঢাকা, সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭ ভাদ্র ১৪৩২

ন্যাশনাল টি কোম্পানিতে মামুন রশীদের হরিলুট

২০২৫ আগস্ট ৩১ ১৯:৩৫:২৩
ন্যাশনাল টি কোম্পানিতে মামুন রশীদের হরিলুট

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ন্যাশনাল টি‘তে হরিলুট করছে কোম্পানিটির চেয়ারম্যান মামুন রশীদ। যার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় রয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। যার ব্যাংকিং ক্যারিয়ারের গুরু হিসেবে পরিচিত মামুন রশীদ।

রাশেদ মাকসুদ বর্তমানে বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে তার ব্যাংকিং খাতে দীর্ঘ ক্যারিয়ার রয়েছে। যে ক্যারিয়ারে গুরু হিসেবে পরিচিত মামুন রশীদ।

সেই গুরুই এখন রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের নিয়ন্ত্রণাধীন কোম্পানি থেকে দক্ষিণা নেওয়া শুরু করেছেন। যা সাদরে দিয়ে যাচ্ছেন রাশেদ মাকসুদ। এক্ষেত্রে আইনকে তোয়াক্কা করা হচ্ছে না।

এই মামুন রশীদ এখন হরিলুটের অংশ হিসেবে স্বতন্ত্র পরিচালক হয়েও ন্যাশনাল টি’র প্রস্তাবিত শেয়ার ইস্যুর কিনতে চাচ্ছে। অথচ ডিএসইতে দেওয়া ডিসক্লোজারে বলা হয়, রেকর্ড ডেটে যারা কোম্পানি শেয়ারধারী তারাই শেয়ার বরাদ্দ পাবে। ২০২৩ সালে রেকর্ড ডেট শেষ হয়েছে। কিন্তু মামুন শেয়ারধারী ছিল না, স্বতন্ত্র পরিচালক হয়ে তিনি এখন ২ লাখ ৫০ হাজার শেয়ার কেনার ঘোষণা দিয়েছেন। বাজারে ২১৪ টাকা করে শেয়ার হলেও তিনি ১১৯ টাকায় শেয়ার বরাদ্দ পেতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। এটাকে নিয়ম লঙ্ঘন বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, ন্যাশনাল টি’র আর্টিকেল ও সিকিউরিটিজ কমিশনের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে বোর্ড মির্টিং ফি ৬,০০০ হাজার টাকা থেকে ১২,০০০ টাকায় বাড়িয়ে নিয়েছে পরিচালনা পর্ষদ। এছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের মাসিক সম্মানি ৬০০০ টাকা থেকে ৭৫০০০ টাকা বাড়িয়ে নিয়েছেন কোম্পানীর চেয়ারম্যান মামুন রশিদ।

অথচ কোম্পানীর আর্টিকেলের ১২৮ ধারা অনুযায়ী এজিএম এর অনুমোদন ছাড়া বোর্ড মিটিং ফি বৃদ্ধি করার সুযোগ নাই। এছাড়া সিকিউরিটিজ কমিশনের ২২-০৩-২০২১ তারিখে জেড ক্যাটাগরি কোম্পানীর নোটিফিকেশন অনুযায়ী জেড ক্যাটাগরি কোম্পানীর পরিচালকদের ফি হবে সর্বোচ্চ ৮,০০০ টাকা।

বিএসইসি চেয়ারম্যানের ন্যায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধ নিয়োগের গুরু দক্ষিনা স্বরুপ বোর্ড সদস্যদের খুশি করতে বর্তমান এমডি জিয়াউল আহসান ও কোম্পানী সচিব আজাদ চৌধুরি ওই অনিয়ম ঘটিয়েছে। যেখানে বাধাঁ দিচ্ছেন না বিএসইসি চেয়ারম্যান।

এ কোম্পানিটিতে আগে একজন পরিচালক মিটিং ফি বাবদ প্রাপ্য হতেন ৬,০০০ টাকা। যেখান থেকে ১০% ট্যাক্স কর্তন করে নীট ৫৪০০ টাকা করে পরিচালকদের প্রদান করা হত।

তবে বর্তমান এমডি জিয়াউল আহসান ও কোম্পানী সচিব আজাদ চৌধুরী, তাদের অবৈধ নিয়োগের প্রতিদান স্বরুপ বোর্ড সদস্যদের খুশি করতে মিটিং ফি দ্বিগুন অর্থাৎ ১২,০০০ টাকা করে দিয়েছেন। যেখান থেকে ট্যাক্স কর্তনের পর একজন পরিচালক পাচ্ছেন ১০,৮০০ টাকা করে।

অন্যদিকে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের স্বাক্ষরিত একটি পত্রে দেখা যায় যে, কোম্পানির চেয়ারম্যন মামুন রশিদ তার মাসিক সম্মানি বৃদ্ধি করে নিয়েছেন ৭৫,০০০ টাকা। এর আগে কোম্পানীর চেয়ারম্যান প্রতি মাসে সম্মানি বাবদ প্রাপ্ত হতেন মাত্র ৬,০০০ টাকা। এ ধরনের কাজ ক্ষমতার চরম অপব্যবহার ও লুটপাটের শামিল বলে মনে করছে বিনিয়োগকারীরা।

পরিচালকগণ এমন সময় তাদের মিটিং ফি ও সম্মানি বৃদ্ধি করেছেন, যখন চা বাগানের ১২০০০ শ্রমিকের ২৫ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া, কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ৫ মাসের বেতন বকেয়া, চা বাগানের ৬ মাসের গ্যাস ও বিদ্যুত বিল বকেয়া রয়েছে।

এ ধরনে সংকটময় পরিস্থিতি নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে নিজেদের সুবিধা বাগিয়ে নিয়ে পরিচালনা পর্ষদের সদ্যস্যগণ নৈতিকতা হারিয়েছেন বলে বিনিয়োগকারীরা মনে করে এবং তাদের পরিচালক পদে থাকার নৈতিক অধিকার রয়েছে কিনা, তা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা দেখবেন বলে আশা করেন।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে