ঢাকা, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ডিএসইতে নিয়ম ভেঙ্গে তদবিরে নিয়োগ পাওয়া সিএফও বহাল তবিয়তে

২০২৪ আগস্ট ২৮ ০৯:৪৫:১৬
ডিএসইতে নিয়ম ভেঙ্গে তদবিরে নিয়োগ পাওয়া সিএফও বহাল তবিয়তে

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রথম সারিতেও কর্মকর্তা নিয়োগে তদবিরের (লবিং) বিষয়টি অনেক আগে থেকেই ওপেন সিক্রেট। যে স্টক এক্সচেঞ্জটিতে প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (সিআরও) খায়রুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদের ন্যায় প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) হিসেবে সাত্বিক আহমেদ শাহকে নিয়োগ দেওয়া হয় লবিংয়ে। যাকে নিয়ম ভেঙ্গে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। যার কোন পেশাদার হিসাববিদ প্রতিষ্ঠানের সনদ নেই এবং সর্বশেষ কর্মস্থলে অতিরিক্ত সিএফও’র দায়িত্ব পালন করেন। যিনি এখন সিআরও এর ন্যায় বিএসইসির এক কমিশনারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন বলে অভিযোগ আছে।

তবে এসব বিষয় অস্বীকার করেছেন সাত্বিক আহমেদ শাহ।

ডিএসইর এক কর্মকর্তা অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, স্বাত্তিক আহমেদ শাহকে নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হয়নি। ডিএসইতে সিএফও পদে লোকবল নিয়োগের জন্য অনেক আবেদন জমা পড়ে। এরমধ্য থেকে যাচাই-বাছাই করে ৬ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয়। যেখানে স্বাত্তিক শাহর নাম ছিল না। কিন্তু ওই সময় নমিনেশন অ্যান্ড রিমিউউনারেশন কমিটির এক সদস্যের একক ইচ্ছায় তালিকায় স্বাত্তিক শাহর নাম ঢুকান। এরপরে সব পরিচালকদের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে ওই সদস্য একক ইচ্ছায় তাকে সিএফও হিসেবে নিয়োগ দেন। কিন্তু ওই ৬ জনের প্রত্যেকেই স্বাত্তিক শাহর থেকে বেশি যোগ্য ছিল।

এরপর থেকে স্বাত্তিক শাহ সিএফও হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। যার মেয়াদ ২ বছরের বেশি হয়ে গেছে। যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠা স্বাত্তিক শাহ দায়িত্ব পাওয়ার পরে অপব্যবহারও করেন। তিনি নিজের সুবিধার্থে ডিএসইর পুরোনো এফডিআর ভেঙ্গে পছন্দের প্রতিষ্ঠানে এফডিআর করেন। আর এখন বিএসইসির এক কমিশনারের হয়ে মূলত ডিএসইতে দায়িত্ব পালন করছেন। অনেকটা সিআরও খায়রুল বাশারের জায়গাটা তিনি দখলে নিয়েছেন। শিবলী কমিশন পদত্যাগ করার আগ পর্যন্ত তাদের হয়ে কাজ করে আসছিলেন বাশার।

শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, যেখানে তদবির করে নিয়োগ পাওয়া যায়, সেখানে ভালো কিছু আশা করা যায় না। অথচ স্টক এক্সচেঞ্জে দক্ষ জনবল নিয়োগ দেওয়া উচিত। যারা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবসায় উন্নতি করতে সক্ষম। এরা বসে বসে বেতন ভাতা নিচ্ছে।

অপেশাদার হিসাববিদ সাত্বিক আহমেদ শাহকে প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) হিসেবে বেছে নেয় দেশের প্রধান ও ঐতিহ্যবাহি ডিএসই কর্তৃপক্ষ। এরমধ্য দিয়েই ২০২২ সালের ৩০ জুন কর্মক্ষেত্রে যোগদান করেন তিনি।

আরও পড়ুন.....

আওয়ামীলীগের চাপে নিয়োগ : এখনো বহাল তবিয়তে ডিএসইর সিআরও

এর আগে ডিএসইতে সর্বশেষ সিএফও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন পেশাদার হিসাববিদ আব্দুল মতিন পাটোয়ারি (এফসিএমএ)। যিনি দেশের পেশাদার হিসাববিদ প্রতিষ্ঠান দ্য ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকান্টেন্ট অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) ফেলো সদস্য।

ডিএসইতে যোগদানের পূর্বে সাত্বিক আহমেদ শাহ একুশে টিভি (এস.আলম গ্রুপ) এর অতিরিক্ত প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

তার এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ‘নমিনেশন অ্যান্ড রিমিউনারেশন কমিটি’-তে চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেন ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালক অধ্যাপক মাসুদুর রহমান। এতে সদস্য হিসেবে ছিলেন ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালক সালমা নাসরীন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম ইমরান হামিদ, শেয়ারহোল্ডার পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আমিন ভূইয়া।

এ বিষয়ে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, যেলক্ষ্য নিয়ে ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন করা হয়েছিল, তার কিছুই হয়নি। বরং ডিএসইর ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশনে ক্ষতি হয়েছে। তাই সময় এসেছে ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন পূণ:মূল্যায়নের।

তিনি বলেন, ডিএসইতে যদি যোগ্য স্থানে যোগ্য লোককে বসানো না হয়, তাহলে ডিএসই সঠিক পথে থাকবে না। যা বসানো হয়নি বলে স্টক এক্সচেঞ্জটি সঠিক পথে নেই।

এসব বিষয়ে ডিএসইর সিএফও অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, আমি সারাদিন কাজ করি। আর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি অল্প কয়েকদিন। আর কমিশনের পরিবর্তনও বেশিদিন হয়নি। এরমধ্যে কারও সঙ্গে কিছু আদান-প্রদানের মতো কিছু হয়নি। তবে অন্যকারও আদান-প্রদানের জন্য আমাকে অপদস্থ হতে হয়েছে। যে কাজ আমি কখনো করিনি।

এফডিআর নিয়ে তিনি বলেন, ডিএসইর এফডিআর নিয়ে নিজস্ব পলিসি আছে। এক্ষেত্রে ব্যাংকের যোগ্যতা যাচাই করে এফডিআর করা হয়। আর এফডিআর একক সিদ্ধান্তে হয় না। এটি বোর্ডের অনুমোদনের পরে করা হয়। যা এর আগেও করা হয়েছে।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে