ঢাকা, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ব্যাংক খাতের ৫০% অভিহিত মূল্যের নীচে

২০২৫ জুন ১৪ ২০:০৯:০৭
ব্যাংক খাতের ৫০% অভিহিত মূল্যের নীচে

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশের শেয়ারবাজারে নানান সংকট আর বিনিয়োগকারীদের চরম আস্থাহীনতা বিরাজ করছে। এরমধ্যে ব্যাংক খাতের শেয়ার দর নাজেহাল। বর্তমানে শেয়ারবাজারে ১৮টি ব্যাংকের শেয়ার ফেস ভ্যালু বা ১০ টাকার নিচে লেনদেন হচ্ছে। এর মধ্যে ৫টির শেয়ারের দাম পাঁচ টাকার নিচে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে দেশের ব্যাংকখাতে এক ধরনের বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে। মালিকদের পারস্পরিক যোগসাজশে ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাট করা হয়েছে। ফলে অনেক ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে। সুশাসনের অভাবে বেড়েছে ব্যাংকে খেলাপি ঋণ। সব মিলিয়ে ব্যাংকখাতের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের চরম আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। এ কারণে ব্যাংকের শেয়ার দামে এমন দৈন্যদশা।

বর্তমানে দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকের সংখ্যা ৩৬টি। এর মধ্যে ফেস ভ্যালু বা ১০ টাকার নিচে বিক্রি হচ্ছে ১৮ ব্যাংকের শেয়ার। যার মধ্যে ৫টির শেয়ারের দাম ৫ টাকার নিচে। এ পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ৪ টাকা, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ৩ টাকা ২০ পয়সা, আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ২ টাকা ৮০ পয়সা, ন্যাশনাল ব্যাংকের শেয়ার ৩ টাকা ৭০ পয়সা এবং ইউনিয়ন ব্যাংকের শেয়ার ৩ টাকা ১০ পয়সায় অবস্থান করছে।

ফেস ভ্যালুর নিচে থাকা বাকি ব্যাংকগুলোর মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের শেয়ার ৫ টাকা ২০ পয়সা, সাউথইস্ট ব্যাংকের শেয়ার ৭ টাকা, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ৭ টাকা ৩০ পয়সা, সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার ব্যাংকের শেয়ার ৬ টাকা ৮০ পয়সা, প্রিমিয়ার ব্যাংকের শেয়ার ৭ টাকা ১০ পয়সা, ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার ৬ টাকা ৯০ পয়সা, এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার ৬ টাকা ১০ পয়সা, এনআরবি ব্যাংকের শেয়ার ৯ টাকা ৬০ পয়সা, এনসিসি ব্যাংকের শেয়ার ৯ টাকা ৯০ পয়সা, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের শেয়ার ৭ টাকা ৯০ পয়সা, আইএফআইসি ব্যাংকের শেয়ার ৫ টাকা ৭০ পয়সা, এক্সিম ব্যাংকের শেয়ার ৫ টাকা ৬০ পয়সা এবং এবি ব্যাংকের শেয়ার ৬ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছে।

একটা সময় দেশের শেয়ারবাজারের প্রাণ ছিল ব্যাংক খাত। এখন শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলোর তেমন অবদান নেই বললেই চলে। আগে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে ব্যাংকের শেয়ার কিনতেন। এখন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বড় অংশই ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগ করতে চান না। এ বিনিয়োগ অনীহা সৃষ্টি হওয়ার মূল কারণ ব্যাংকখাতে ঘটে যাওয়া নানা অনিয়ম।

ডিএসইর এক সদস্য বলেন, ব্যাংক খাত শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিন ধরেই একটি ‘লভ্যাংশ দেওয়া নিরাপদ খাত’ হিসেবে বিবেচিত ছিল। বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকায় লেনদেনের বড় অংশজুড়েই থাকতো ব্যাংকের শেয়ার। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের বাস্তবতায় অনেক বিনিয়োগকারী এখন ব্যাংকখাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। কারণ বিভিন্ন ব্যাংকে বড় ধরনের অনিয়ম হওয়ার তথ্য বেরিয়ে এসেছে। কিছু ব্যাংক বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে পারছে না। সব মিলিয়ে ব্যাংকের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের এখন চরম আস্থা সংকট দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন, নামি অনেক ব্যাংকের শেয়ারের দাম এখন ফেস ভ্যালুর নিচে। কিছু ব্যাংক বছরের পর বছর ধরে বিনিয়োগকারীদের শুধু বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ হিসেবে ধরিয়ে দিয়েছে। এতে একদিকে ব্যাংকের মূলধন বেড়েছে, অন্যদিকে বেড়েছে শেয়ারের সংখ্যা। কিন্তু লভ্যাংশ দেওয়ার সক্ষমতা কমে গেছে। যার পরিণতি বর্তমানে ব্যাংকের শেয়ারের দাম। ব্যাংকের এ করুণ দশার কারণে সার্বিক শেয়ারবাজারেও মন্দা বিরাজ করছে।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে