ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

স্বদেশ লাইফের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনার অভিযোগ

২০২৫ ডিসেম্বর ০৯ ০১:৩৪:২৫
স্বদেশ লাইফের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনার অভিযোগ

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক :স্বদেশ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের বিরুদ্ধে ব্যাংক দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনার অভিযোগ করেছেন কোম্পানির একজন এসভিপি। মো. আলমগীর শেখ নামের এই এসভিপি’র অভিযোগ কোম্পানিটিতে দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি, আর্থিক অনিয়ম, ব্যবস্থাপনায় সংকট ও বিমা আইন লঙ্ঘনের মতো নানা ঘটনা ঘটছে।

সোমবার (৮ ডিসেম্বর) অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন তিনি। অভিযোগের কপি বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ), দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) বিভিন্ন সংস্থাকেও দেওয়া হয়েছে।

হাজার হাজার গ্রাহকের সঞ্চিত অর্থ ও ভবিষ্যৎ দাবি নিষ্পত্তি ঝুঁকিতে পড়তে পারে এমন তথ্য উল্লেখ করে, অভিযোগপত্রে কোম্পানির সুশাসন নিশ্চিত করতে এবং গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষা করতে অভিযোগগুলো বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

সাবেক সিইও’র কোটি টাকার আত্মসাৎ :

অভিযোগে বলা হয়, সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. ইখতিয়ার উদ্দিন শাহীন গ্রাহকদের প্রিমিয়ামের ৬০ লাখ ৭০ হাজার ৭১৭ টাকা ও নিয়মবহির্ভূতভাবে গ্রহণ করে ইনসেনটিভ বোনাস বাবদ ৪১ লাখ ৫৬ হাজার ৫০৫ টাকাসহ মোট ১ কোটি ২ লাখ ২৭ হাজার ২২২ টাকা আত্মসাৎ করেন।

আইডিআরএ ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর এই অর্থ কোম্পানির হিসাবে জমা করার জন্য পত্রের মাধ্যমে (স্মারক নং- ৫৩.০৩০০০০০৭১.২৭.০০১.২২.৬/১(৪)) নির্দেশ দেয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত অর্থ ফেরত দেওয়া হয়নি। গ্রাহকের প্রিমিয়াম নিজের ব্যক্তিগত হিসাবে জমা দেওয়ার বিষয়টি তিনি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখিতভাবে স্বীকার করেছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, মো. ইখতিয়ার উদ্দিন শাহীন বিমা আইন লঙ্ঘন ও বিভিন্ন অনিয়মের জন্য ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট আইডিআরএ পত্রের (স্মারক নম্বর- ৫৩.০৩০০০০০৩২.১১.০০৯.১৮.৫০) মাধ্যমে নির্দেশ দেয় মো. ইখতিয়ার উদ্দিন শাহীন স্বদেশ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সিইও হিসেবে কাজ করতে পারবেন না। সেই সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তিনি স্বদেশ লাইফের ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবেন না বা এতে অংশ নেবেন না।

তাছাড়া ২০২৪ সালের ১৩ জুনের পত্রে তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। যার প্রেক্ষিত দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যা তদন্তাধীন রয়েছে। এরপরও তিনি বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন পদ-পদবি ব্যবহার করে কোম্পানির সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন। সর্বশেষ কোম্পানির ৪৯তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক তিনি বর্তমানে আর এস আর এম কোম্পানি নির্বাহী পরিচালক হিসেবে স্বদেশ লাইফে প্রতিনিধিত্ব করছেন। যাহা সম্পূর্ণ অন্যায়- বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

পরিশোধিত মূলধনের বিপরীতে ১৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা ঋণ :

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ও মূলধন থেকে অর্জিত সুদও খরচ করা হয়েছে। কোম্পানির স্থায়ী আমানতের বিপরীতে ১৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে, যা এখনো পর্যন্ত পরিশোধ করা হয়নি। এ বিষয়ে আইডিআরএ থেকে কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানসহ ১২ পরিচালককে অপসারণের নির্দেশ দেয়। কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোম্পানি হাইকোর্টে রিট পিটিশন (নম্বর ২৩৭৪/২০২৪) দায়ের করে। হাইকোর্ট ৬ মাসের জন্য কর্তৃপক্ষের আদেশ স্থগিত করেন। কিন্তু আইডিআরএ’র অবহেলা কিংবা তদ্বীরের অভাবে এখনও পর্যন্ত মামলাটি নিষ্পত্তি হয়নি।

সাত বছর ধরে অডিট নেই, সীমার অতিরিক্ত খরচ :

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, কোম্পানিটি ২০১৪ সাল থেকে ব্যবসা শুরু করে। বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্ত থেকে জানা যায় কোম্পানিটি ২০১৪ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়ে যথাক্রমে ২১৯%, ১৪৯ শতাংশ, ১২৬ শতাংশ, ৯৪ শতাংশ, ১১৫ শতাংশ, ৪১ শতাংশ, ৪৫ শতাংশ অনুমোদিত সীমার অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় করেছে। এছাড়া ২০২১ সাল পরবর্তী ২০২৫ সাল পর্যন্ত কোম্পানিতে কোনো প্রকার অভ্যন্তরীণ অডিট হয়নি। এমনকি এজিএম, ইজিএম হয়নি। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানিতে সিএফও এবং সচিব নেই। বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন কর্মকর্তাকে এই দায়িত্ব সাময়িকভাবে দেওয়া হয়। এতে করে কোম্পানির কোনো প্রকার তথ্য ভাণ্ডার সঠিক নেই।

নেই নিয়মিত সিইও :

স্বদেশ লাইফে ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট সিইও পদটি শূন্য হওয়া এবং আইডিআরএ’র নির্দেশনা থাকা স্বত্বেও এখনো কোনো স্থায়ী (নিয়মিত) সিইও নিয়োগ করা হচ্ছে না। একেক সময় একেক কর্মকর্তাকে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই পর্যন্ত ৩ জন সিইও চলতি ও একজন প্রশাসকসহ মোট ৪ জন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে আব্দুল জব্বার কাউসার সিইও (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্বে আছেন, তার বিরুদ্ধে কোম্পানির দায়ের করা চুরির মামলা সিএমএম আদালত, ঢাকাতে চলমান- বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

অনলাইন ব্যাংকিং না থাকায় ম্যানুয়াল লেনদেনে জালিয়াতি :

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, কর্মকর্তাদের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকায় এবং কোম্পানিটি অনলাইনভিত্তিক না হওয়ায় মাঠ পর্যায় থেকে হেড অফিসের কর্মকর্তাদের বেতন, ভাতা, কমিশন বিলসহ ভাড়া সব লেনদেন ম্যানুয়াল সিস্টেম হওয়ার কারণে নামে, বে-নামে বিভিন্ন প্রকার বিল ভাউচার সমন্বয় করা হয়। বিভিন্ন প্রকার ইনসেনটিভ সঠিক বণ্টন না করে কিছু কর্মকর্তা নিজেদের স্বার্থে যাকে যতটুকু দিয়ে ম্যানেজ করতে পারে তাকে তাই দেওয়া হয়। আবার অনেককে কিছুই দেওয়া হয় না। প্রতিবাদ করলে চাকরি থাকবে না বলে ভয় দেখানো হয় এবং সংগঠন বিচ্যুতি ঘটানোর ফলে অনেকে কোনো প্রতিবাদ করেন না।

কোম্পানি ২০১৯ সাল থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো প্রকার সরকারি ভ্যাট, ট্যাক্স পরিশোধ করেনি। কোম্পানিতে কর্মরত কর্মকর্তাকে তাদের বেতন থেকে কর্তন করা ভ্যাট, ট্যাক্সের বৈতনিক সনদ দেওয়া হয়নি- বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

পাঠকের মতামত:

বীমা এর সর্বশেষ খবর

বীমা - এর সব খবর



রে