ঢাকা, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

পর্ব ১

কারসাঁজি দেখিয়ে দিল বীচ হ্যাচারি

২০২৩ ডিসেম্বর ০৬ ১০:৩০:১২
কারসাঁজি দেখিয়ে দিল বীচ হ্যাচারি

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বীচ হ্যাচারির ভবন ও হ্যাচারি ইক্যুপমেন্ট ভেঙ্গে ফেলার পরে ৭ বছর আগে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে উৎপাদনে ফিরেছে বলে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তথ্য প্রকাশ করেছে। তবে সত্যিই উৎপাদনে ফিরেছে কিনা, তা নিয়ে নানা সন্দেহজনক বিষয় উঠে এসেছে নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে। যে কোম্পানিটির উৎপাদনে ফেরা নিয়ে নিরীক্ষকেরা আগের বছরগুলোতে অনেক শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন।

ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে থাকা এ কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ে চলছে কারসাজি। যেখানে কৃত্রিম আর্থিক হিসাব দেখিয়ে সাধারন বিনিয়োগকারীদেরকে আকৃষ্ট করা হচ্ছে। এ কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে নিট মুনাফা অর্জনের খবর প্রকাশ করা হলেও, তার সত্যতা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। তারন তারা নানা ইস্যুতে কৃত্রিম আর্থিক হিসাব দেখিয়েছে।

সরকার বীচ হ্যাচারির ভবন ও হ্যাচারি ইক্যুপমেন্ট ভেঙ্গে ফেলার পরে আর্থিক হিসাবে ২২ কোটি ২১ লাখ টাকার স্থায়ী সম্পদ দেখানো হয়েছে। তবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ওই সম্পদের বিপরীতে কোন রেজিস্টার ও বুকস অব অ্যাকাউন্টস নিরীক্ষককে দেয়নি। এমনকি ওই সম্পদের সঠিক বা প্রকৃত দর মূল্যায়নে ইমপেয়ারমেন্ট টেস্ট করেনি। যেখানে ব্যয় বৃদ্ধি ও সম্পদ কমে আসা স্বাভাবিক।

এ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ৬ বছর ধরে গ্রাহকের কাছে ২৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা পাওনা দেখিয়ে আসছে। যে অর্থ আদায় নিয়ে এরইমধ্যে শঙ্কা তৈরী হয়েছে। এই অবস্থায় ওই পাওনার বিপরীতে সঞ্চিত (প্রভিশনিং) গঠন বাধ্যতামূলক হলেও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তা করেনি। এতে করে ব্যয় কম ও মোট সম্পদের পরিমাণ বেশি করে দেখানো হয়েছে। এছাড়া ওই পাওনা টাকার বিষয়ে নিরীক্ষক নিশ্চিত হতে গ্রাহকদের চিঠি দিতে চাইলেও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তা করতে দেয়নি।

দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা হ্যাচারির ব্যবসায়ি এ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ মজুদ পণ্য দেখিয়েছে ৬১ লাখ টাকার। কিন্তু তারা নিরীক্ষককে এর স্বপক্ষে কোন প্রমাণ দেখাতে পারেনি। এমনকি তাদের নিজেদের কাছে ইনভেন্টরি লেজার নেই। এছাড়া কোম্পানিটির কারখানায় সরেজমিনে কোন মজুদ পণ্য পায়নি নিরীক্ষক।

এই কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আর্থিক হিসাবে হাতে ও ব্যাংকে ২ কোটি ৪৫ লাখ ৭৩ হাজার টাকা নগদ রয়েছে বলে উল্লেখ করেছে। এরমধ্যে হাতে ২ কোটি ৪৩ লাখ ৪৩ হাজার টাকা এবং ব্যাংকে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা দেখিয়েছে। কিন্তু কোম্পানির নামে ৬টি ব্যাংক হিসার থাকলেও নিরীক্ষককে শুধুমাত্র অগ্রনি ব্যাংকের স্টেটমেন্ট দেওয়া হয়েছে। এছাড়া হাতে নগদের সত্যতার বিষয়ে ক্যাশ বুকস দেয়নি। এছাড়া ওই ব্যাংকের টাকার বিষয়ে নিরীক্ষক নিশ্চিত হতে ব্যাংকে চিঠি দিতে চাইলেও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তা করতে দেয়নি।

এ কোম্পানিটিরও ঋণ রয়েছে। কোম্পানিটির আর্থিক হিসাবে ২ কোটি ১২ লাখ টাকার সিকিউরড ঋণ দেখানো হয়েছে। তবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ নিরীক্ষককে ওই ঋণ গ্রহণের উদ্দেশ্য, চুক্তি, লেজার বা অন্যকোন প্রমাণাদি দেয়নি।

কোম্পানিটির আর্থিক হিসাবে ক্লোজিং বা গত ৩০ জুন কৃষি ব্যাংকের ২ কোটি ৪৩ লাখ টাকার স্বল্পমেয়াদি ঋণ দেখানো হয়েছে। যা ওই অর্থবছরের শুরুতে ৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু ব্যাংক স্টেটমেন্টে শুরুতে ২ কোটি ৫৬ লাখ টাকার ঋণ পায় নিরীক্ষক। ব্যাংক স্টেটমেন্ট ও আর্থিক হিসাবে দেখানো এই বড় ব্যবধানের কোন সদুত্তর দিতে পারেনি কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।

উল্লেখ্য, ২০০২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া বিচ হ্যাচারির পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৪১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এরমধ্যে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন শ্রেণীর (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতিত) বিনিয়োগকারীদের মালিকানা ৬৫.০৩ শতাংশ। কোম্পানিটির মঙ্গলবার (০৫ ডিসেম্বর) শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ৪৭.৭০ টাকায়।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে