ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১

বিনিয়োগকারীরা হারিয়েছে ১০৭ কোটি

বছর না যেতেই শিবলী কমিশনের দুই ব্যাংক বন্ধের উপক্রম : পাইপলাইনে বিতর্কিত এনআরবি ব্যাংক

২০২৩ ডিসেম্বর ১৮ ০৯:৫৪:০৩
বছর না যেতেই শিবলী কমিশনের দুই ব্যাংক বন্ধের উপক্রম : পাইপলাইনে বিতর্কিত এনআরবি ব্যাংক

বিনিয়োগকারীদের অনাগ্রহ সত্ত্বেও ব্যাংকের প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে অগ্রাধিকার দেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। প্রয়োজনে পাবলিক ইস্যু রুলসের বিভিন্ন বাধ্যবাধকতাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ছাড় বা অব্যাহতি দিয়ে ব্যাংকের দ্রুত আইপিও দেয়। অথচ ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ নেই। যাতে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশনের ইউনিয়ন ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারে এখন ক্রেতা থাকে না এবং অভিহিত মূল্যের নিচে চলে এসেছে। বছর না যেতেই তারল্য সংকটে ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার উপায় ব্যাংক দুটির। এরমধ্যে আবার বিতর্কিত শিবলীর ঘনিষ্ট ও বিতর্কিত ব্যবসায়ী মাহতাবুর রহমানের এনআরবি ব্যাংককে আইপিও দিয়ে রেখেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক কারা নিয়ন্ত্রন করে, তা কমিশন খুবই ভালো করে জানতো। ফলে ব্যাংক দুটির ভবিষ্যত কি, কমিশন সেটাও বুঝতো। এটা না বোঝার কিছু নাই। তারপরেও কমিশন জেনেশুনেই ব্যাংক দুটির আইপিওর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের টাকাকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। এখন এসব কোম্পানির আইপিও কিভাবে ও কোন প্রক্রিয়ায় দেওয়া হয়, সেটাও সবাই জানে। তাই পুঁজির সুরক্ষায় বিনিয়োগকারীদের নিজেকেই সচেতন হতে হবে। অন্যর আশায় থেকে ফলাফল পাওয়া দূরহ।

বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার শুরু থেকেই শিল্পায়নে অর্থায়নে ঋণের পরিবর্তে ইক্যুইটি হিসেবে শেয়ারবাজারের গুরুত্বারোপ করে। যা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করছে। কিন্তু সেই কমিশনই শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহে ব্যাংক-বীমাকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের অনুমোদন অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে। যেসব অর্থ ঘুরেফিরে ঋণ হিসেবেই শিল্পায়নে যাচ্ছে।

অধ্যাপক শিবলীর নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০২২ সালে চট্টগ্রামের বিতর্কিত সাইফুল আলমের (এস. আলম) পরিবারের নিয়ন্ত্রণাধীন গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংককে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের সুযোগ দেয়। যে ব্যাংক দুটি শেয়াবাজারে আসার পরে ১ বছর না যেতেই টাকার সংকটে লেনদেন সেবা বন্ধের উপক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ এ ব্যাংক দুটিকেই শিবলী কমিশন রেকর্ড ৮৫৩ কোটি টাকা তুলে নিতে দিয়েছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠির মাধ্যমে উঠে এসেছে, টাকার ঘাটতির কারণে দেশের শরিয়াহভিত্তিক ৫ ব্যাংকের আর্থিক লেনদেন সেবা বন্ধের উপক্রম। এরমধ্যে শিবলী কমিশনের গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক রয়েছে। এসব ব্যাংককে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের চলতি হিসাবের স্থিতি ঋণাত্মক। বিষয়টি বারবার অবহিত করার পরও ব্যাংকগুলো উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তাই বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি হিসাবের ঋণাত্মক স্থিতি সমন্বয়ের জন্য ২০ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ২০ দিনের মধ্যে চলতি হিসাবের ঋণাত্মক স্থিতি সমন্বয় না করা হলে ক্লিয়ারিং বা নিষ্পত্তি ব্যবস্থা থেকে ব্যাংকগুলোকে বিরত রাখা হবে। যেসব ব্যাংককে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেগুলো হলো ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক। গত ২৮ নভেম্বর ব্যাংক পাঁচটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের এ চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আরও পড়ুন.....

অলিম্পিক এক্সেসরিজের মজুদ পণ্য নষ্ট ১৬ কোটি টাকার : গ্রাহকদের থেকে আদায় হবে না ৯ কোটি

বর্তমান কমিশনের অনুমোদনের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতের গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক শেয়ারবাজার থেকে ৪২ কোটি ৫০ লাখ সাধারণ শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ৪২৫ কোটি টাকা উত্তোলন করে। যে ব্যাংকটির শেয়ার লেনদেনের প্রথম (গত ১৬ নভেম্বর) দিনেই অভিহিত মূল্যের নিচে বা ১০% কমে ৯ টাকায় লেনদেন হওয়ার রেকর্ড গড়ে। যে শেয়ারটি ৮.৬০ টাকার ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে, এখন ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না।

অন্যদিকে গত বছরের ২৬ জানুয়ারি লেনদেন শুরু হওয়া চট্টগ্রামের একই পরিবারের নিয়ন্ত্রণাধীন ইউনিয়ন ব্যাংকের শেয়ারও অভিহিত মূল্যের নিচে রয়েছে। তবে ফ্লোর প্রাইসের কারনে ৮.৯০ টাকায় আটকে আছে। যে দরে কোন ক্রেতা পাওয়া যায় না। এই ব্যাংকটিকে কমিশন ৪২৮ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দিয়েছিল।

ব্যাংক দুটিকে ৮৫৩ কোটি টাকার মতো বিশাল আকারের আইপিও কমিশন দিলেও বিনিয়োগকারীরা হতাশ। এরইমধ্যে বিনিয়োগকারীদের গ্লোবাল ব্যাংকে শেয়ারপ্রতি ১.৪০ টাকা করে মোট ৫৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং ইউনিয়ন ব্যাংকে শেয়ারপ্রতি ১.১০ টাকা করে মোট ৪৭ কোটি ৮ লাখ টাকা টাকা নাই হয়ে গেছে। এই দুই ব্যাংকে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের ক্যাপিটাল লোকসান ১০৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।

ব্যাংকের এই দুরবস্থার মধ্যেই বর্তমান কমিশনের আইপিও অনুমোদন দেওয়া বিতর্কিত মাহতাবুর রহমানের এনআরবি ব্যাংক অর্থ উত্তোলনের অপেক্ষায় রয়েছে। অর্থপাচারসহ নানা অপকর্মে যার নাম জড়িত। যিনি ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের আসনে রয়েছেন এবং অধ্যাপক শিবলীর সঙ্গে যার ঘনিষ্ট সর্ম্পক্য। এ ব্যাংকটিকে প্রতিটি ১০ টাকা মূল্যে ১০ কোটি শেয়ার ইস্যু করে শেয়ারবাজার থেকে ১০০ কোটি টাকা উত্তোলন করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যা উত্তোলনে আইপিও আবেদনের অনুমোদন পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে