ঢাকা, সোমবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

সঞ্চিতি ঘাটতি ৩২৮৫ কোটি টাকা

শেয়ারপ্রতি ৫২ টাকার লোকসান যেভাবে কমে ১৪ টাকা

২০২৫ ডিসেম্বর ০৮ ০৯:০৫:৫৩
শেয়ারপ্রতি ৫২ টাকার লোকসান যেভাবে কমে ১৪ টাকা

ইব্রাহিম হোসাইন (রেজোয়ান) : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। যার অন্যতম উদ্দেশ্য শেয়ারবাজারকে সাপোর্ট দেওয়া হলেও প্রতিষ্ঠানটিকে কারসাজিকারদের স্বার্থ উদ্ধারে ডাম্পিং স্টেশন বানানো হয়েছে। যাতে বস্তা পঁচা শেয়ারের পোর্টফোলিওতে ভরা প্রতিষ্ঠানটির পোর্টফোলিও। এতে করে স্বাভাবিকভাবেই বড় লোকসান প্রত্যাশিত। তবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ যথাযথ সঞ্চিতি গঠন না করে প্রকৃত লোকসান আড়াল করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। যার ধারাবাহিকতা ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও অব্যাহত ছিল। যার মাধ্যমে ওই অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি (৫২) টাকার লোকসানকে কমিয়ে (১৪) টাকা দেখানো হয়েছে।

দেখা গেছে, কারসাজিকারদের ডাম্পিং স্টেশন হওয়ার কারনে কোম্পানিটির ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৪৫০০ হাজার কোটি টাকা বা শেয়ারপ্রতি (৫২) টাকা লোকসান হয়েছে। তবে এ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ওই বছরের ব্যবসায় ১২১৪ কোটি টাকা বা শেয়ারপ্রতি (১৪) টাকা লোকসান দেখিয়েছে।

আইসিবির ২০২৪-২৫ অর্থবছরের আর্থিক হিসাবে এ তথ্য উঠে এসেছে।

এ খাতের সংশ্লিষ্টদের মতে, আইসিবি শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান। যার অন্যতম কাজ শেয়ারবাজারকে সাপোর্ট দেওয়া। কিন্তু বাস্তবে এ প্রতিষ্ঠানটিরই সাপোর্ট দরকার। শক্তিশালী এ প্রতিষ্ঠানটিকে এই অবস্থায় এনেছে কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। যারা শেয়ারবাজারের কারসাজিকারদের সঙ্গে যোগসাজোশে বস্তা পঁচা শেয়ার কিনে ডাম্পিং করেছে। এতে করে কারসাজিকাররা তাদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে বেরিয়ে গেছে, আর আইসিবিকে আটকানো হয়েছে। যে কারনে প্রতিষ্ঠানটিকে এখন অনেক আনরিয়েলাইজড লোকসানের কবলে পড়তে হয়েছে। যে কারনে তৈরী হয়েছে সঞ্চিতি ঘাটতি।

আইসিবির ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি (১৪.০০) টাকা করে নিট লোকসান দেখানো হয়েছে ১ হাজার ২১৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আর নিট সম্পদ ৩ হাজার ২৪৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি নিট ৩৭.৪৫ টাকা সম্পদ দেখানো হয়েছে।

তবে আর্থিক হিসাবে জানানো হয়েছে, এ কোম্পানিটির ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সঞ্চিতি ঘাটতি ৩ হাজার ২৮৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা। যা গঠন না করে অতিরঞ্জিত সম্পদ, মুনাফা ও ইক্যুইটি দেখানো হয়েছে। একইসঙ্গে দায় কম দেখানো হয়েছে।

তবে কোম্পানিটিকে বিএসইসি ওই সঞ্চিতি গঠনে ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বর্ধিত করেছে। তবে বিএসইসির এই সুযোগ আন্তর্জাতিক হিসাব মানের সঙ্গে সামঞ্জসূপূর্ণ না। কারন কোম্পানিটিকে এখন সঞ্চিতি গঠন থেকে বিরত থাকার সুযোগ দিলেও ভবিষ্যতে ঠিকই এই বিশাল পরিমাণের সঞ্চিতি করতে হবে। সেটার প্রভাব এখন না দেখিয়ে ভবিষ্যতে দেখানো হবে। এটা এক ধরনের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা।

হিসাব মান অনুযায়ি কোম্পানিটির ২০২৪-২৫ অর্থবছরেই ঘাটতির ৩ হাজার ২৮৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা সঞ্চিতি গঠন করা দরকার ছিল। যা করা হলে কোম্পানিটির ওই বছরে ৪ হাজার ৪৯৯ কোটি ৬ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি (৫২) টাকা লোকসান হতো।

এদিকে ওই প্রয়োজনীয় সঞ্চিতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গঠন করা হলে কোম্পানিটির দেখানো ৩ হাজার ২৪৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকার নিট সম্পদ কমে ঋণাত্মক ৩৭ কোটি ২ লাখ টাকায় বা শেয়ারপ্রতি সম্পদ ৩৭.৪৫ টাকা থেকে কমে ঋণাত্মক (০.৪৩) টাকায় নেমে আসতো।

উল্লেখ্য, ১৯৭৭ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া আইসিবির পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৮৬৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এরমধ্যে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন শ্রেণীর (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতিত) বিনিয়োগকারীদের মালিকানা ৩.৮০ শতাংশ। কোম্পানিটির রবিবার (০৭ ডিসেম্বর) শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ৩৬.৬০ টাকায়।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে