ঢাকা, শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকেই মাকসুদের অপসারন চান বিনিয়োগকারীরা

২০২৫ মে ১০ ০৮:৫৭:১৮
প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকেই মাকসুদের অপসারন চান বিনিয়োগকারীরা

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : ‘পুঁজিবাজার উন্নয়ন ও শক্তিশালীকরণ’ এর লক্ষ্যে রবিবার (১১ মে) অর্থ উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ও বিএসইসির চেয়ারম্যানকে নিয়ে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ওই বৈঠকেই বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন অযোগ্য কমিশনের অপসারন চান বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া বৈঠকে বিনিয়োগকারীদের কোন প্রতিনিধি না রাখায় ক্ষোভ ছাড়েন তারা। যেখানে তারা স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধি রাখার দাবি করেন তারা।

শনিবার (১০ মে) ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) অডিটরিয়ামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব বলেন বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর এসোসিয়েশনের নেতারা।

তারা বলেন, এখন পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে শেয়ারবাজার বুঝে এবং উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে এমন কাউকে রাখা হয়নি। যেখানে স্টক এক্সচেঞ্জ, মার্চেন্ট ব্যাংকার, ব্রোকার, সম্পদ ব্যবস্থাপক, বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধিসহ এসব স্টেকহোল্ডারদের কেউ থাকবে না। অথচ এরাই শেয়ারবাজারের বিদ্যমান সমস্যার কারন বুঝে। বিপরীতে যাদের নিয়ে অভিযোগ, তাদেরকেই রাখা হয়েছে বৈঠকে। তাই স্বাভাবিকভাবেই তারা তাদের ব্যর্থতা তুলে ধরবেন না প্রধান উপদেষ্টার কাছে।

তাদের দাবি, বর্তমান বিএসইসি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের শেয়ারবাজার অব্যাহত পতন। এর কারন হিসেবে মাকসুদ কমিশনের অযোগ্যতাকে দায়ী করেন তারা। তাই এই কমিশনের অপসারন চানা তারা। তবে নিজের আত্মীয় হওয়ায় অর্থ উপদেষ্টা তাকে অপসারন করছেন না বলে অভিযোগ করেন। এমনকি প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীও রাশেদ মাকসুদকে প্রশ্রয় দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। এই অবস্থায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তাদেরকে নিয়েই শেয়ারবাজারের উন্নয়ন ও শক্তিশালী করার জন্য বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। যেখানে অন্যসব স্টেকহোল্ডারদের কেউ থাকবে না। এতে করে ওই বৈঠকে প্রকৃতপক্ষে কোন ভালোকিছু হবে না বলে বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাস।

বিনিয়োগকারীদের এ সংগঠনটির নেতারা জানান, মাকসুদ শেয়ারবাজার বুঝেন না। এটা শুধু সাধারন বিনিয়োগকারীদের কথা না। এই কথা এখন বিএসইসির সাবেক স্বনামধন্য চেয়ারম্যানসহ স্টেকহোল্ডারদের। তাই মাকসুদের অপসারন করা উচিত।

আরও পড়ুন....

কাউকে পাত্তা দেবেন না, তা হবে না : এনসিপি’র যুগ্ন মূখ্য সমন্বয়ক

মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর শেয়ারবাজার অনেক পিছিয়ে পড়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে তারা দাবি করেন। এরমধ্যে তারা তুলে ধরেন -

১। মার্কেট ক্যাপিটেল হারিয়েছে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা।

২। মার্কেট সূচক হারিয়েছে প্রায় ১১০০ পয়েন্টস।

৩। ৯০% বিনিয়োগকারী পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে।

৪। এ পর্যন্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত জরীপে বাংলাদেশ সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের প্রতি অনাস্থা দাড়িয়েছে ৯৫% এরও বেশি।

৫। ৯৫% বিনিয়োগকারী তার অপসারণ চাচ্ছেন।

৬। মার্কেট RSI ১১ বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের ইতিহাসে সর্বনিম্ন এবং বিশ্ব রেকর্ড ও বটে। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার ক্লিনিক্যালি ডেড হয়ে গেছে।

৭। পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সবাই ইতিমধ্যে মন্তব্য করেছেন যে, বর্তমান কমিশনের চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পুঁজিবাজার নিয়ে কোন ধারণা নেই বাস্তব অভিজ্ঞতা ও নেই। এমনকি পুঁজিবাজারের উন্নতি ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের কোন সদিচ্ছা নেই। একটি প্রতিষ্ঠান যথাযথভাবে পরিচালনার জন্য প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বের যোগ্যতা ও গুণাবলী থাকা প্রয়োজন যার কিছুই নেই তার মধ্যে।

৮। কমিশনের উপরে আস্থার সংকটের কারণে গত ৮ মাসেও মৌলভিত্তিক কোন কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসার জন্য কোন আগ্রহ দেখায়নি এতে শেয়ারবাজার নিস্তেজ হয়ে পড়েছে।

৯। বিধিতে না থাকা সত্ত্বেও নিজেদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ. যার মধ্যে আপ্যায়ন বাবদ প্রতিমাসে চেয়ারম্যান ৩০০০ টাকা এবং প্রত্যেক কমিশনারের জন্য ২৫০০ টাকা বরাদ্দ থাকলেও বাস্তবে চেয়ারম্যান প্রতি মাসে ২৫ হাজার টাকা এবং কমিশনার গন ১৫০০০ টাকা করে উত্তোলন করেছেন এবংসরকারি নিয়ম অনুযায়ী কমিটির সদস্যদের প্রতি সভার সম্মানিত ভাতা বাবদ, ৩০০০ থেকে ৫০০০টাকা প্রধানের উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে তারা প্রতি মাসে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ব্যতিরেখে বহিঃসদস্যদের প্রতি দুই লক্ষ টাকা প্রদান করা হচ্ছে। যা সম্পূর্ণরূপে পুঁজিবাজার স্বার্থ বিরোধী এবংবেয়াইনী।

১০। বিধির বিভিন্ন শর্ত ও যোগ্যতা শিথিল করে নিজের পছন্দ মত বিভিন্ন তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে স্বাধীন পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।

১১। সিকিউরিটিজ আইন বহির্ভূত ভাবে বিনিয়োগকারীদের Customer Consolidated Account(CCA) একাউন্টে অর্জিত সুদ প্রধান থেকে বিনিয়োগকারীদেরকে বঞ্চিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেনযা বিনিয়োগ কারিগণের স্বার্থের পরিপন্থী।

১২। বর্তমান কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনারগন কর্তৃক পুঁজিবাজারে অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরূপ দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই কোন ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বহু সংখ্যক কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করেছেন। যার মাধ্যমে লক্ষাধিক বিনিয়োগকারীদেরকে পথে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।

১৩। ৯ মে ২০২৫ইং তারিখ অনুযায়ী প্রতিবেশী দেশগুলো এবং আমাদের দেশের পুঁজিবাজারের সূচক নিম্নরূপ:

ভারত : (BSE Index 79,454)

পাকিস্তান : ( KSE Index 1,07,174)

বাংলাদেশ : ( DSE Index 4, 802 )

এই চিত্র প্রমাণ করে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। অতএব উপরে উল্লেখিত তথ্যের ভিত্তিতে নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে অপসারণ অনিবার্য এবং অতি জরুরী।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে