ঢাকা, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১

বিএসইসির সাইফুর রহমানকে বিতর্কিতভাবে বাধ্যতামূলক অবসর

২০২৫ মার্চ ০৫ ১০:২৯:০১
বিএসইসির সাইফুর রহমানকে বিতর্কিতভাবে বাধ্যতামূলক অবসর

ইব্রাহিম হোসাইন (রেজোয়ান) : বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অন্যতম যোগ্য নির্বাহি পরিচালক সাইফুর রহমানকে বিতর্কিতভাবে বাধ্যতামূলক অবসর দিয়েছে কমিশন। একইভাবে আরও কয়েকজনকে এই অবসর দেওয়ার পরিকল্পনা করে রেখেছে খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন। যা নিয়ে বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভিতরে তৈরী হয়েছে চরম ক্ষোভ।

মঙ্গলবার (০৪ মার্চ) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ সাক্ষরিত এক আদেশে তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে।

আদেশে বলা হয়েছে, জনস্বার্থে বিএসইসির কর্মচারী চাকরি বিধিমালার ৬৩ ধারা ও সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ এর ৪৫ ধারার ক্ষমতাবলে সাইফুর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে। তবে এই দুইটি আইনের মধ্যে ৬৩ ধারায় শাস্তি পাওয়া ব্যক্তির পূণ:বিবেচনার আবেদনের সুযোগের কথা বলা হয়েছে। আর সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরকারি না, কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং তাদের নিয়োগ ও অবসরের নিজস্ব আইন থাকা সত্ত্বেও রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন সাইফুর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসরে সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ এর ৪৫ ধারার ক্ষমতা ব্যবহারের কথা বলেছে।

এ বিষয়ে সুপ্রীমকোর্টের অ্যাডভোকেট খাদেমুল ইসলাম অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, যদি কোন প্রতিষ্ঠানের চাকরি বিধিমালা নিয়ে নিজস্ব কোন আইন থাকে, তাহলে সেই আইন অনুযায়ি শাস্তি বা বাধ্যতামূলক অবসর দিতে হবে। এ কারনে কাউকে বিএসইসির আইন দ্ধারা নিয়োগ করে অন্য আইনে শাস্তি দেওয়া যাবে না। এমনটি করা হয়ে থাকলে, তা অবৈধ হবে। সেক্ষেত্রে ভুক্তভোগী আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

উদাহরন হিসেবে খাদেমুল ইসলাম বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ ও চাকুরিচ্যুত করার নিজস্ব আইন আছে। তাই এসব প্রতিষ্ঠানে তাদের নিজস্ব আইন দ্ধারাই নিয়োগ ও চাকুরিচ্যুত করা হয়।

বিএসইসির কর্মচারী চাকরি বিধিমালার ৬৩ ধারায় বলা হয়েছে, কর্মচারীদের অবসর গ্রহণ ও উহার পর তাদের পুণ:নিয়োগের বিষয়ে সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ এর ৫৭ ধারা প্রযোজ্য হবে। যে ধারায় শাস্তি প্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর পূণ:বিবেচনার আবেদনের সুযোগের কথা বলা হয়েছে। যা আদেশকারী তার আদেশ সংশোধন, বাতিল বা বহাল রাখতে পারবে। অর্থাৎ এই আইনে বাধ্যতামূলক অবসরকারীকে পূণ:বিবেচনার সুযোগ রাখা হয়েছে।

অন্যদিকে সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ এর ৪৫ ধারার ক্ষমতাবলে সাইফুর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসরের যে আদেশ প্রদানের কথা বলা হয়েছে, সেই ধারায় বিএসইসির কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কারন না দর্শাইয়া চাকরি থেকে অবসর প্রদানের সুযোগ রাখা হয়েছে।

তবে বিএসইসি একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ, বাতিল, পূণ:নিয়োগ কমিশনের উপর অর্পিত করা হয়েছে। এর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরকারের না, কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী। এদের জন্য বিএসইসির নিজস্ব আইন আছে। যেখানে বিএসইসির চাকরি বিধিমালার ৫০ এর (খ) এর (ই)-তে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদানের সুযোগ রাখা হয়েছে। যা গুরুদন্ড হিসেবে বিবেচিত।

এই গুরু দন্ড কার্যকরে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অভিযোগনামা অবহিত করার ১০ কার্যদিবসের মধ্যে আত্মপক্ষ সমর্থনে লিখিত বক্তব্য পেশ করার সুযোগ দেওয়া এবং প্রস্তাবিত দন্ড কেন তার উপর আরোপ করা হবে না, সর্ম্পক্যে কারণ দর্শানোর কথা বলা হয়েছে। এমনকি অভিযুক্ত ব্যক্তি সময় বৃদ্ধির জন্য আবেদন করলে, সেই সুযোগ দিতে হবে। তবে রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন তাদের এই নিজস্ব আইনকে অনুসরন করেনি।

এ বিষয়ে জানতে বিএসইসির পরিচালক ও মূখপাত্র মো. আবুল কালামের সঙ্গে যোগযোগ করলেও তিনি কোন মন্তব্য করবেন না বলে জানান।

উল্লেখ্য, রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব নিয়েই গত বছরের ২২ আগস্ট সাইফুর রহমানকে ইস্যুয়ার কোম্পানি অ্যাফেয়ার্স বিভাগ থেকে আরঅ্যান্ডডি বিভাগের দায়িত্ব দেয়। তখনই মূলত তাকে এক প্রকার ওএসডি করা হয়। তবে ৯ সেপ্টেম্বর সেই দায়িত্ব থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়। সেই থেকে সাইফুর রহমান নিয়মিত অফিসে আসছেন, কিন্তু কোন কাজ করতে পারছেন না।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে