ঢাকা, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩১ ভাদ্র ১৪৩২

ইসলামী ব্যাংকের ঋণ ১.৫৫ লাখ কোটি টাকা, খেলাপি ৬৬ হাজার কোটি

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৫ ০৯:২৫:৫৭
ইসলামী ব্যাংকের ঋণ ১.৫৫ লাখ কোটি টাকা, খেলাপি ৬৬ হাজার কোটি

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ইসলামী ব্যাংক দখলের মাধ্যমে এস.আলম চক্র বেনামে হাজার হাজার কোটি টাকা গায়েব করে দিয়েছে। যে কারনে একসময়ের শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকটি ব্যবসায় পরিচালনায় ঝুঁকিতে পড়েছে। যে ব্যাংকটি নগদ সংকটের কবলেও পড়েছিল। তবে আওয়ামী সরকারের পতনের পরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।

ব্যাংকটির সম্প্রতি ২০২৪ সালের প্রকাশিত আর্থিক হিসাবে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এ ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে।

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, ব্যাংকটি থেকে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রদত্ত ঋণ বা বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার ১২৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এরমধ্যে ৬৫ হাজার ৭১৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা খেলাপি হয়ে গেছে। এজন্য ব্যাংকটির ৫৩ হাজার ৯৩০ কোটি ৬০ লাখ টাকা সঞ্চিতি গঠন করা দরকার ছিল। তবে ব্যাংকটি করেছে ৬ হাজার ২ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে সঞ্চিতি ঘাটতি ৪৭ হাজার ৯২৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।

এ ব্যাংকটির অফ-ব্যালেন্স শিট (মূল ব্যালেন্স শিটে সরাসরি অন্তর্ভুক্ত থাকে না, কিন্তু ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা ও ঝুঁকিকে প্রভাবিত করে) আইটেম ছিল ২৪ হাজার ৯৬৩ কোটি ৯ লাখ টাকা। এজন্য ব্যাংকটির ১৮ হাজার ৭১৮ কোটি ২১ লাখ টাকা সঞ্চিতি গঠন করা দরকার ছিল। তবে ব্যাংকটি করেছে ৫৮৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে সঞ্চিতি ঘাটতি ১৮ হাজার ১৩৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা। ইসলামী ব্যাংকের অন্যান্য ব্যাংক লিজিং কোম্পানিতে পাওনা অর্থের পরিমাণ ৮ হাজার ৬১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এই অর্থ আদায় ঝুঁকিতে থাকায় ৩ হাজার ৬০২ কোটি ৫০ লাখ টাকার সঞ্চিতি গঠন করা দরকার ছিল। তবে ব্যাংকটি করেছে ৩৮ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে সঞ্চিতি ঘাটতি ৩ হাজার ৫৬৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

ব্যাংকটির আনরেসপন্ডেড আইবিডিএ সম্পদের জন্য ৪৬৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা সঞ্চিতি গঠন করা দরকার ছিল। তবে ব্যাংকটি করেছে ৩১৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে সঞ্চিতি ঘাটতি ১৪৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।

এসব মিলিয়ে ব্যাংকটির ৭৬ হাজার ৭১৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা সঞ্চিতি গঠন করা দরকার ছিল। তবে ব্যাংকটি করেছে ৬ হাজার ৯৪৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে সঞ্চিতি ঘাটতি ৬৯ হাজার ৭৭০ কোটি ৯০ লাখ টাকা বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক।

আরও পড়ুন...

ঝুঁকিতে ব্যবসা : অনিশ্চিত গ্রাহকদের আমানত

এই বিশাল সঞ্চিতি ঘাটতি সত্ত্বেও ইসলামী ব্যাংকে মূলধনের ঘাটতি পেয়েছে নিরীক্ষক। ব্যাংকটির গত ৩১ ডিসেম্বর ১৬ হাজার ৬১৫ কোটি ২৮ লাখ টাকার মূলধন থাকা দরকার ছিল। তবে ব্যাংকটির প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকার সঞ্চিতি গঠন না করা সত্ত্বেও মূলধন ঘাটতি ছিল ৬ হাজার ৫৪৮ কোটি ৬ লাখ টাকা।

ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ি, ব্যাসেল-৩ এর শর্ত পূরণে ব্যাংকটির মূলধন পর্যাপ্ততা অনুপাত (সিআরএআর) দরকার ছিল ১২.৫০%। তবে সঞ্চিতি ঘাটতি সত্ত্বেও ব্যাংকটির এ অনুপাত ছিল ৭.৫৭%।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ি, একটি ব্যাংক মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫% কোন একটি কোম্পানি বা গ্রুপকে ঋণ দিতে পারবে। কিন্তু ইসলামী ব্যাংক থেকে একাধিক গ্রুপ বা প্রতিষ্ঠানকে ২৫% এর বেশি ঋণ দেওয়া হয়েছে।

ব্যাংকটির ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর) এবং স্ট্যাচুটরি লিকুইডিটি রেশিও (এসএলআর)-তেও পিছিয়ে। এর অর্থ ব্যাংকটি নগদ অর্থের সংকটে ছিল। ব্যাংকটির ২০২৪ সালে নিট নগদ প্রবাহ ছিল ঋণাত্মক ১ হাজার ১২৮ কোটি ৫ লাখ টাকা।

উল্লেখ্য, সিআরআর অর্থ একটি ব্যাংকের মোট আমানতের একটি নির্দিষ্ট অংশ, যা কোনো সুদ ছাড়াই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে নগদ হিসেবে জমা রাখতে হয়। আর এসএলআর হলো একটি নিয়ম, যেখানে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে তাদের মোট আমানতের একটি নির্দিষ্ট অংশ নগদ, সোনা বা সরকারি সিকিউরিটিজ হিসেবে নিজেদের কাছে রাখতে হয়।

উল্লেখ্য, ১৯৮৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ইসলামী ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১ হাজার ৬০৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। এরমধ্যে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন শ্রেণীর (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতিত) বিনিয়োগকারীদের মালিকানা ৯৯.৮১ শতাংশ। কোম্পানিটির শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ৪১.৩০ টাকায়।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে