ঢাকা, বুধবার, ১৩ আগস্ট ২০২৫, ২৯ শ্রাবণ ১৪৩২

১২০০ কোটির খেলাপি ঋণে দিশেহারা ইউনিয়ন ক্যাপিটাল

২০২৫ আগস্ট ১৩ ০৯:৩০:৪৯
১২০০ কোটির খেলাপি ঋণে দিশেহারা ইউনিয়ন ক্যাপিটাল

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : দেশের শেয়ারবাজারে নন ব্যাংকিং বা আর্থিক খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইউনিয়ন ক্যাপিটাল লিমিটেড প্রায় ১২০০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের ভারে জর্জারিত হয়ে পড়েছে। শুধু তাই-ই নয়, সুদ ব্যয়ের হিসাব কম দেখানো, অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণের দুর্বলতা, ব্যাপক পুঁজির ঘাটতিসহ সবমিলে চলমান অনিশ্চয়তায় থাকায় কোম্পানিটির অবস্থা সংকটাপন্ন। এতে করে কোম্পানিটি এক গভীর আর্থিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। একইসাথে আর্থিক হিসাব প্রণয়নের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়নি।

ইউনিয়ন ক্যাপিটাল লিমিটেডের ৩১ ডিসেম্বর’২০২৪ সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

ভয়াবহ খেলাপি ঋণ ও ভবিষ্যত অনিশ্চয়তা :

প্রতিবেদন বলছে, টানা লোকসানের ফলে সমাপ্ত হিসাব বছরে সৃষ্ট তাদের পুঞ্জীভূত লোকসান ছিল ১ হাজার ২৮২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। আর খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৯৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা। কোম্পানিটির পুঁজির পরিমাপক ( ক্যাপিটাল একুয়েসি রেশিও) ছিল ঋণাত্নক সাড়ে ৭৬ শতাংশ। যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত সীমার অনেক নিচে। এই খেলাপি ঋণের ঘাটতির ফলে ইউনিয়ন ক্যাপিটাল ব্যাসেল-২ কাঠামোর আওতায় নির্ধারিত মানদণ্ড পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

এ বিষয়ে কোম্পানির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, তারা কোম্পানিটির পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরমধ্যে শ্রেণিকৃত ঋণের আদায়, আইনি পদক্ষেপ, বন্ধকী সম্পত্তি বিক্রির চেষ্টা চলছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে একটি পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা ও টাইম বাউন্ড কর্মপন্থা জমা দিয়েছে। এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর কোম্পানির কার্যক্রম পরিচালনার ভবিষ্যত নির্ভর করছে।

কম সুদের হিসাব ও যাচাইযোগ্যতার অভাব :

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭৯৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা টার্ম ডিপোজিট বা মেয়াদি আমানত হিসেবে দেখিয়েছে। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে এর একটি বড় অংশ সময়মতো পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। এ হিসাবের ওপর সুদ হিসাব করা হয়েছে সাধারণ পদ্ধতিতে অর্থাৎ শুধু মূল টাকার উপর, যেখানে ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্টান্ডার্ড (আইএফআরএস) ৯ অনুযায়ী (ইফেক্টিভ ইন্টারেস্ট মেথর্ড) অনুসরণ করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ সেদিকে হাটেনি। এই কারণে প্রতিষ্ঠানটির সুদ ব্যয় কম দেখিয়েছে প্রায় ১৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনিয়ন ক্যাপিটালের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা বলেন, ক্লাইন্টদের মেয়াদি আমানত পরিশোধের ক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় হয়নি। একইসাথে সুদ ব্যয় আমরা আগের মতোই সাধারন পদ্বতিতে হিসাব করেছি।

সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ব্যয়ের স্বীকৃতির অভাব :

নিরীক্ষা তথ্য বলছে, ইউনিয়ন ক্যাপিটালের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউনিক্যাপ ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ২৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা সুদ ব্যয় হিসাব করেনি। এতে করে কোম্পানিটি আন্তর্জাতিক হিসাব মান (আইএএস) ১ ও আইএফআরএসের ৯ মানদণ্ড লঙ্ঘন করেছে।

সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সুদ ব্যয়ের স্বীকৃতি সম্পর্কে বেলায়েত হোসেন বলেন, আমাদের কোম্পানিটির সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউনিক্যাপ ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডকে মার্জিন হিসাবে দেওয়া অর্থের ওপরে কোনো সুদ চার্য করা হয়নি। শেয়ারবাজারে ব্যাপক ধ্বসের কারণে ২০১৪ সালের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে মার্জিন ঋণের ওপর সুদ স্থগিত করেছিল। এ কারণে সহযোগী ইউনিক্যাপ ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সুদ ব্যয়ের হিসাব করেনি।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে